আশা-নিরাশার দোলাচলে ভোলার তরমুজ ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন!

আশা-নিরাশার দোলাচলে ভোলার তরমুজ ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন!
আশা-নিরাশার দোলাচলে ভোলার তরমুজ ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন!

মহাজনের চড়া সূদ থেকে মুক্তি চায় ভোলার কৃষকরা তরমুজের উৎপাদন বাড়াতে স্বল্প সূদে ব্যাংক ঋণের দাবি জানিয়েছেন তরমুজ ব্যবসায়ীরা। অর্থকরী এই ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগের কোন সহায়তা পাচ্ছেনা স্থানীয় কৃষকরা।

দ্বীপজেলা  ভোলায় প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হলেও এই ফসল চাষ করে কৃষকরা বেশীর ভাগ সময়েই লাভের মুখ দেখেনা। এবছর হয়তো লোকসান গুনতে হবে তরমুজে। প্রকৃতির উপর  নির্ভর করে আশা নিরাশার  ভাগ্য দোলে তাদের কপাল।

মহাজনের কাছ থেকে চড়া সূদে দাদন নিয়ে তরমুজের চাষ করায় লাভের বড় একটা অংশ চলে যায় মহাজনের ঘরে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ফসল খুব যত্নের সঙ্গে চাষাবাদ করতে হয়। সেক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ থেকে সঠিক তদারকি ও পরামর্শ  পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ  কৃষকদের।এ অবস্থায় স্বল্প সূদে ব্যাংক ঋণ, প্রণোদনা এবং কৃষি  বিভাগকে পাশে পাওয়ার দাবি।

সাধারণত: কোন জমিতে তরমুজের চাষ করলেই ফলন মেলে না, তরমুজ চাষের জন্য প্রয়োজন শুষ্ক পলিমাটি, পর্যাপ্ত রোদ, উন্নত জাতের  বীজ এবং সঠিক পরিচর্যা। আর আবহাওয়া  হচ্ছে এর প্রধান নেয়ামক শক্তি। দীর্ঘ মেয়াদে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,হালকা বৃস্টি কিংবা ঘন কূয়াশা, সব কিছুই তরমুজ চাষের জন্য অন্তরায়। ফলে একজন সাধারণ  কৃষকের   পক্ষে সহজেই বুঝে ওঠা সম্ভব হয়না। আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে কোন জমিতে কখন কোন জাতের তরমুজের চাষ করে কি পদ্ধতিতে যত্ন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কৃষকরা কিছুটা  স্বস্তিতে থাকলেও বেশিরভাগ কৃষকের নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।
প্রয়োজন হয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মীদের সার্বিক সহায়তা। কিন্তু কাঙ্খিত  সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ মাঠপর্যায়ে কৃষকদের। গত বছর যে কৃষক লোকসান দিয়ে নিঃস্ব হয়েছে তার পক্ষে এ বছর আবার তরমুজ চাষের অর্থের জোগাড়  করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বাধ্য হয় চড়া সূদে মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরমুজ নিয়ে ভাইরাল।তাই সুস্বাদু এই ফল নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসন তদারকি শুরু করে। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশে তরমুজের দাম মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে ক্রয় ক্ষমতা।চৈত্রমাসে প্রচন্ড গরম না থাকা এবং রমজানের তাপমাত্রা সহনীয় থাকায় রসালো তরমুজের চাহিদা কমে গেছে। তরমুজের পর্যাপ্ত ফলণ স্বাভাবিকেররকারনে তরমুজের দাম তুলনামূলক অনেক কম।কৃষক অনেক পরিশ্রম করে সঠিক দাম পায়না।

খেতে যে তরমুজ  ১ শ' টাকা, বাজারে তার দাম ৪ থেকে ৭ শ' টাকা।১ শত ৬০ শতাংশের  ১ কানি জমিতে তরমুজের চাষ করতে খরচ হয় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। তরমুজের ফলন হয় ১৮ শ' থেকে ২ হাজার। এতে প্রতি পীচ তরমুজের উৎপাদন  ব্যয় হয় প্রায় ১ শত টাকা। কৃষকরা বেপারীদের কাছে প্রতিপিচ  বিক্রি  করে ২শ থেকে আড়াই শ টাকায়। বেপারিরা বিক্রি  করে ৩ শ' টাকা। অথচ সেই তরমুজই খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে ৪ শ', ৫ শ',৬শ এমনকি ৮ শ' টাকায়।

পরিবহন ব্যয়,অতিরিক্ত খাজনা ও নানা খাতে বাড়তি খরচ করতে হয় বলে তরমুজ বেশী দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এ দিকে দাম বেশী হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে  চলে গেছে সুস্বাদু এই তরমুজ। 
স্থানীয়  কৃষিকর্মকর্তা বলছেন, তরমুজের  মৌসূম এখনও আসেনি। রমজানে ভালো  লাভের আশায়  কিছু ব্যবসায়ী আগেভাগে অপরিপক্ক তরমুজ বাজারে বিক্রি শুরু করে।

চরফ্যাশন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন আখন বলেন, নিজস্ব পুঁজি না থাকায় মহাজনের  কাছ থেকে চড়া সূদে ঋণ নিয়ে তরমুজের  আবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়ে। ব্যাংক থেকে স্বল্প সূদে ঋণ  পেলে তারা একদিকে মহাজনের  কবল থেকে মুক্তি পাবে। অন্যদিকে আরো বেশী পরিমান জমিতে   আবাদ  করলে তরমুজের  উৎপাদন  বাড়বে ।

চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, গভীর উর্বরতাযুক্ত মৃত্তিকা ও উত্তম নিষ্কাশন সম্পন্ন জমিতে তরমুজ ভালো জন্মায়। বেলে  দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী। চরফ্যাশনে এ বছর ১২ হাজার হেক্টর ভূমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তরমুজ চাষে ৭হাজার২শ শ্রমিক তরমুজ চাষের সাথে জড়িত। গতবার  বৃস্টির কারনে তরমুজ চাষিদের অপুরণীয়  লোকসান হয়েছে।  আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাব না হলে ফলন এবার গতবারের চেয়ে ভাল ফলণের আশাবাদী। লাভ জনক তরমুজের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়; সে জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।