কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে মাঠ মাতাবে এবার কারা! | সংবাদ চিত্র

কাতার  বিশ্বকাপ ফুটবলে মাঠ মাতাবে এবার কারা! | সংবাদ চিত্র

বিশ্বকাপ কাতার ফুটবল খেলায় এবার মাঠ কাঁপাতে উৎসবমুখর নাও হতে পারে! আগামি মাসে নভেন্বরের ২১ তারিখ অনুষ্ঠিতব্য কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সকল আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে।বৈশ্বিক কারনে এবার শীতে এই খেলার আয়োজন করেছে কাতার(দুবাই)।

মেসি ও নেইমারের মত ২০১০ বিশ্বকাপ মাতিয়ে দেওয়ায় আরও একজনের অবদান ছিলো। তিনি হলেন শাকিরা। শাকিরার সামিনা মিনা গান আর নাচ, মানুষ দেখতো পাগলের মতো করে, সুরও মেলাতো। আমার মা কখনোই খেলা টেলা দেখে না, অথচ তিনিও সেই গানের পর থেকে শাকিরাকে চেনেন। গান একটা ম্যাজিকাল জিনিস। যে কোন উৎসব বা এন্টারটেইনমেন্টকে  মুহূর্তের মধ্যেই  মোমেন্টাম দিয়ে ফেলতে পারে একটা গান। অন্যদিকে ভালো একটা গানের অভাবে অনেক উৎসবই ঠিকঠাক জমতে পারে না। কদিন আগে হাওয়া মুভির কথাই ধরেন। সাদা সাদা কালা কালা গানটা যদি এতো জনপ্রিয়তা না পাইতো, তাহলে কি মুভিটা এতো মানুষ দেখতো বা নাম জানতো? মনে হয় না। মনে আছে, মনপুরা সিনেমার ক্ষেত্রেও সবার আগে আগ্রহ জাগিয়েছিলো গান ই। ফজলুর রহমান বাবুর নিথুয়া পাথারে বা কৃষ্ণকলির সোনার পালঙ্কের ঘরে শোনার পর আর কারো পক্ষেই আসলে মনপুরা না দেখে থাকা সম্ভব ছিলো না। আমার আরেকটা প্রিয় মুভি প্রাক্তন। কলেজে উঠার পর থেকে বাংলা মুভি আর দেখা হয় নাই। 

প্রাক্তন মুভিটাও আমার কোনভাবেই দেখার কথা ছিলো না। প্রসেনজিৎ বা ঋতুপর্ণার অভিনয়ের ভক্ত আমার মা, আমি না। কিন্তু প্রাক্তন মুভিটা আমি দেখতে বাধ্য হয়েছি গান শুনে। ট্রেনের দরজায় প্রসেনজিৎ মাথা বের করে দিয়েছেন, আর গান বাজতেসে, ভ্রমর কইও গিয়া.... শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে.....অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে.... ভ্রমর কইও গিয়া। গানটা আমার অনেক প্রিয় ছিলো, সন্দেহ নাই। কিন্তু ঐ যে প্রসেনজিতের এক্সপ্রেশন, ঋতুপর্ণা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে গানের অপূর্ব মিশে যাওয়া, ঐ দৃশ্য দেখে আমার তখনই মনে হলো, সিনেমাটা আমার  দেখা উচিত। এবং সত্যি সত্যিই সিনেমাটা আমি দেখলাম। এবং এখনও প্রাক্তন আমার খুব প্রিয় একটা সিনেমা। এই সিনেমা আমি যতবার দেখেছি, তারচেয়েও বেশিবার টেনে টেনে দেখেছি ঐ ভ্রমর কইও গিয়া গানের অংশটুকু। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে প্রাক্তন মুভির সবচে রোমান্টিক কোনটা? আমি আর সবার মতোই মালিনীর সেই শেষ সংলাপটাই বেছে নেব। ‘কে বলেছে তুমি আমাকে গিফট দাওনি, দিদিভাই’? তুমি তো আমাকে আমার জীবনের সেরা গিফটটাই দিয়েছো। তুমি আমাকে আমার উজানকে দিয়েছ। কিন্তু কেউ যদি বলে, প্রাক্তন মুভির কোন দৃশ্যটা আমি মনে রেখেছি? আমি ঐ গানের দৃশ্যের কথাই বলবো। একটা গান কখনও কখনও একটা মুভির চেয়েও বেশি হতে পারে। টাইটানিক মুভি সমন্ধেও আগ্রহী হয়েছিলাম মাই হার্ট উইল গো অন গানটা শুনেই। টাইটানিক মুভির সবচে সুন্দর দৃশ্য কোনটা ছিলো? রোজের হাসি নাকি মাই হার্ট উইল গো অন গানটা? আমি শিওর, এই প্রশ্নের উত্তর বেশিরভাগ মানুষই দিতে পারবেন না।


কোলকাতার মা সিরিয়ালটার কথা আপনাদের মনে আছে কি না জানি না। ‘ঐ চাঁদের টিপে ঘুম আসে না মা, দোলনা দোলে, মন দোলে না মা’ এই গানটা রিলিজ হওয়ার সাথে সাথেই আমি দোকানে, সেলুনে, বাজারে বাজারে গানটা বাজতে শুনেছি। ফলাফল? মা সিরিয়াল পৌঁছে গেল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। তেরি মেরি, মেরি তেরি গানটা দিয়ে যেমন সালমান খানের বডিগার্ড পেয়েছিলো তুমুল জনপ্রিয়তা। তাহলে হিট গান ছাড়া কি ভালো অনুষ্ঠান হয় না? হয়। প্রতি বছর গান ছাড়াই তো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ বা প্রিমিয়ার লীগ হইতেসে। কোপা, ইউরো দুইটাই হিট গান ছাড়াই সফল হইলো। আয়নাবাজি মুভির ক্ষেত্রেও গানের চে গল্পের টানেই মানুষ বেশি হলে গেছে। কাজেই, ভালো গান না থাকলেই যে বিনোদন ভালো হবে না এমন না। তবে ভালো গান ছাড়া উৎসবের জোয়ারটা আসা অসম্ভব। ওই যে আমার মা খেলা না দেখা সত্বেও, শাকিরার গান শুনে বিশ্বকাপ সম্পর্কে জেনেছিলেন, গান দেখার সাথে সাথে আফ্রিকার জীবনটাও একটু দেখে নিয়েছিলেন, এটা গান ছাড়া সম্ভব হতো না। কাতার বিশ্বকাপের গানটাও ভালো হলো না। 


এর অর্থ এই না যে খেলা ভালো হবে না। ২০১৪, ২০১৮ বিশ্বকাপেও গান তেমন ভালো হয় নাই, তবে খেলা ছিলো একশোতে একশো। তবে কাতার বিশ্বকাপ উৎসব উৎসব ভাবটা সম্ভবত কম নিয়ে আসতে পারবে। প্রথমত, কাতার আফ্রিকার মতো ডাইভার্স কালচারের দেশ না, ওদের বৈচিত্র্য কম। দ্বিতীয়ত, ওদের ক্রিয়েটিভিটিও কেন যেন মনে হচ্ছে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। নোরা ফাতিহকে না দিয়ে যদি কাতার নিজেদের মতো করেই, নিজেদের কালচার বা লিটারেচারকে আপহোল্ড করে ক্রিয়েটিভ একটা গান বানাইতে পারতো, যা মিডল ইস্টরে সবার সামনে তুলে ধরবে, তাহলে গানটা হয়তো ভালো হতো। সাহিত্য আর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নান্দনিকতা থাকতে হয়, ক্রিয়েটিভিটি থাকতে হয়। শুধু টাকা ঢেলে চাকচিক্য কেনা যায়, নান্দিকতা কেনা যায় না। জোর করে গর্জিয়াস বানাইতে গেলে যে শিল্প প্রাণ হারায়, সেইটার প্রমাণ হয়ে থাকলো ২০১৮ আর ২০২২ এর দুইটা বিশ্বকাপই।