দিঠির অপেক্ষায় গাজী মাজহারুল আনোয়ার | সংবাদ চিত্র

দিঠির অপেক্ষায় গাজী মাজহারুল আনোয়ার | সংবাদ চিত্র

প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের দুই সন্তান; উপল ও দিঠি। শেষ বিদায়ে কবির সঙ্গে পুত্র উপল থাকলেও অনেক দূরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন কন্যা গায়িকা দিঠি। অথচ এই কন্যাই কবির ছায়া হয়ে থাকতেন সারাক্ষণ, ঘরে অথবা বাইরে।

মূলত সেই কন্যার অপেক্ষাতেই আছে পুরো গাজী পরিবার। কবির ভাগনে অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় সকাল ১০টা নাগাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ রাখা হয়েছে হাসপাতালের হিমঘরে। বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। 


তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই দিঠির জন্য অপেক্ষা করছি। ও আমেরিকা থেকে আজ (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটার দিকে দুবাই নামার কথা। সেখানে তার অবস্থান করার কথা রয়েছে। এখন দুবাই নেমে সঙ্গে সঙ্গে দেশের টিকিট পাওয়া এবং আসাটা জটিল হবে হয় তো। আমরা আশা করছি, সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে দিঠি ঢাকায় নামতে পারবে। ও আসার পরই বাকি সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত হবে।’


এর আগে রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৩০ ‍মিনিটের দিকে মৃত্যু হয় কিংবদন্তি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের। ভোর সাড়ে ছ’টার দিকে নিজ বাসার বাথরুমে জ্ঞান হারান তিনি। চিকিৎসকরা ধারনা করছেন, তিনি স্ট্রোক করেছেন।

কবির ভাগনে জয় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামা গত দু’দিন ধরে শারীরিকভাবে খানিক অসুস্থ ছিলেন। তবে সেটি উল্লেখযোগ্য কিছু ছিলো না। বার্ধক্যজনিত কিছু ছোট জটিলতা। আজ সকালে আল্ট্রাসাউন্ড করার কথা ছিল খালি পেটে। সাড়ে ছয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যান। সেখানেই মাথাঘুরে পড়ে যান এবং জ্ঞ‍ান হারান। ছেলে উপল আনোয়ার দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন জ্ঞান ফেরাতে। কিন্তু পারলেন না।’  

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’-সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের এই রচয়িতা গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এছাড়াও পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা ১১০।


গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও দিঠি আনোয়ার
দীর্ঘ ৬০ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২০ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন। বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় তার লেখা চারটি গান রয়েছে। তার লেখা আরও কালজয়ী কিছু গান হলো ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ প্রভৃতি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৬৪ সাল থেকে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে আয়না ও অবশিষ্ট চলচ্চিত্রের জন্য। ১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখাতেও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’ ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৪১টি।