বোতলজাত সয়াবিন আমদানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত-সংবাদ চিত্র

বোতলজাত সয়াবিন আমদানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত-সংবাদ চিত্র

আন্তর্জাতিক বাজারে না কমলে বাংলাদেশের বাজারেও সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। দাম নিয়ন্ত্রণে পরিশোধিত বোতলজাত সয়াবিন তেল আমদানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আসছে ঈদুল আজহার আগে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

আগে বোতলজাত সয়াবিন তেল শুধু আমদানিকারক ও তেল পরিশোধন কারখানাগুলোই আনতে পারত।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সব ধরনের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারবেন।
গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভায় পরিশোধিত বোতলজাত সয়াবিন তেল ও প্যাকেটজাত চিনি আমদানির সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা। সভায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আমদানিকারক ও তেল পরিশোধন কারখানাগুলোর পাশাপাশি এ খাতের অন্য ব্যবসায়ীদেরও পরিশোধিত বোতলজাত সয়াবিন তেল আমদানির সুযোগ দিলে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। বাজার ব্যবস্থা উন্মুক্ত হলে কেউ চাইলেও বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। একই সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকবে। সংকট তৈরি হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের পাশাপাশি পরিশোধিত বোতলজাত সয়াবিন তেল আমদানির সুযোগ পেলে চাহিদা অনুযায়ী সরাসরি পাইকারি পর্যায়ের বিক্রেতারাও আমদানির সুযোগ পাবেন। বাজার উন্মুক্ত করে দিলে আমদানিকারকদের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না খুচরা ব্যবসায়ীদের। প্রয়োজনমতো ঋণপত্র (এলসি) খুললে নির্দিষ্ট সময়ে তেল দেশে চলে আসবে।

স্বাভাবিক সময়ে অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেওয়া হলেও এখন ৫ শতাংশ ভ্যাট দেন ব্যবসায়ীরা। পরিশোধিত বোতলজাত সয়াবিন তেল আমদানির ভ্যাট অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ভ্যাট হার নির্ধারণে সামঞ্জস্য রাখা হবে। যাতে আমদানি করা এবং স্থানীয়ভাবে পরিশোধিত তেলের দামের খুব বেশি পার্থক্য না হয়। পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির জন্য বর্তমানে ২৬ শতাংশ ভ্যাট ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আমিন হিলালী দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বোতলজাত সয়াবিন তেল আমদানি উন্মুক্ত করে দিলে ভালো হবে। পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সবাই সুযোগ পাবেন। সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ন্যায্য মূল্যে সয়াবিন তেল পাবেন ভোক্তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা নিউ মার্কেট ডি-ব্লক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যবসায়ীদের তেল দিতে সরবরাহকারীরা শর্ত জুড়ে দেন। তেলের সঙ্গে চা পাতা ও পোলাওয়েরও চাল নিতে বাধ্য করে। তার পরও সময়মতো তেল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি পরিশোধিত বোতলজাত সয়াবিন তেল আমদানির সুযোগ পেলে আমদানি করে ভোক্তার চাহিদা পূরণ করতে পারব। এতে বাজারে কোনো গোষ্ঠীর একচেটিয়া প্রভাব থাকবে না। ’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসের চাহিদা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন হয় ২ লাখ ৩ হাজার টন। আমদানি করা হয় ১৮ লাখ টন। অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় প্রায় ৫ লাখ টন। এ ছাড়া ২৪ লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি করা হয়, সেখান থেকে ৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল হয়। অপরিশোধিত পাম তেল আমদানি করা প্রায় ১১ লাখ টন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এবং মালয়েশিয়ায় শ্রমিকের অভাবে পাম তেল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি টন দুই হাজার মার্কিন ডলার এবং পাম তেলের টন ১ হাজার ৯৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ সরকার আমদানিপর্যায়ে ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করেছে।
ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার পরও দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ৬ মে থেকে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ৩৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ৪৪ টাকা ও পাম তেলের লিটারে ৪২ টাকা দাম বাড়ে। দাম বাড়িয়েও বাজার স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত মাঠে নামে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপরই গুদামে মজুদ করা সয়াবিন ও পাম তেল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১১ লাখ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সহকারী প্রধান (বাজার নিয়ন্ত্রণ) মাহমুদুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা চাইলে আমদানি করতে পারে। পরিশোধিত সয়াবিন তেল খোলা অবস্থায় বেশি করে এনে বোতলজাত করলে দাম অনেক কমে যাবে। বোতলজাত আনলে দাম একটু বেশি পড়বে।