পিআরএল অবস্থায় সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিনের রাজনীতি !

পিআরএল অবস্থায় সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিনের  রাজনীতি !

সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ রাজনীতি!  এ নিয়ে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া  সচিবের পদ থেকে গত বছরের ১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়া মেজবাহ উদ্দিনের সরাসরি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহন করায় পিআরএল  বিধি লঙণ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে 

জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে, কোন সরকারি কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার তিন বছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। 

অন্যদিকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতি করা যাবে কি না, এ বিষয়ে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ভোলা-৪ আসনে  জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে  সদ্য  অবসরে যাওয়া ক্রীড়া  সচিবের দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়া মেজবাহ উদ্দিন  দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চাকুরি বিধি লঙন হওয়ার ঘটনাটি এখন আলোচনা সমালোচনায়!

যুব ও ক্রীড়া  সচিবের পদ থেকে ১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়া মেজবাহ উদ্দিন কে এখনও কোনদলে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দলের সদস্য পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ঈদুল ফিতরের পরে তিনি তার এলাকায় কয়েকদিন যাবৎ তার কতিপয় সমর্থকদের নিয়ে একটি দলের রাজনৈতিক শ্লোগান দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

ঈদেরদিন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন হাট বাজারে গণসংযোগে  গিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের দলীয়  সন্ভাব্য  সংসদ সদস্য পদে ভোলা-৪ আসনে নিজেকে প্রার্থী দাবি করে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন।

জনমনে প্রশ্ন সদ্য অবসরে যাওয়ার পরে পিআরএল অবস্থায় এখনও তিনি সরকারি গাড়ি বেতন-ভাতা ও সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন। পিআরএল অবস্থায়  তিনি কীভাবে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন! 

সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী, উচ্চ পদস্থ একজন আমলা মেজবাহ উদ্দিন। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী তিনি অবসরে যাওয়ার এক বছর অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) ভোগ করবেন। পিআরএল থাকা অবস্থায় সরকারি চাকরিজীবীরা তাঁদের ছুটি চলাকালীন ১২ মাস মূল বেতনের সাথে  বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য প্রাপ্যতা পেয়ে থাকেন। চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরে পেনশন-গ্র্যাচুইটি পাবেন। সরকারি সুবিধা নেয়া অবস্থায় কোন আমলা বা সরকারি কর্মকর্তা  কোন রাজনৈতিক দলে যুক্ত থাকা বা নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয়া চাকরি বিধি পরিপন্থি।

২০১৫ সালের আগে সরকারি কর্মকর্তারা অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে বা এলপিআরে (লিভ প্রিপারেশন ফর রিটায়ারমেন্ট) যেতেন। ২০১৫ সালে এর নাম হয় অবসর–পরবর্তী ছুটি বা পিআরএল পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ অনুসারে, চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর চুক্তিভিত্তিক কর্মরত থাকা ব্যতীত, কোনো ব্যক্তির, বৈদেশিক বা বেসরকারি চাকরি বা কোনও প্রকল্পে চাকরি গ্রহণ, অন্য কোনো পেশা গ্রহণ, ব্যবসা পরিচালনা এবং বিদেশ যাত্রার জন্য সরকার বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। তবে শর্ত থাকে যে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে, অনুরূপ ভিন্ন চাকরি বা পেশা গ্রহণ, ব্যবসা পরিচালনা বা বিদেশ যাত্রা বারিত করে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারবে।

সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন গত বছরের ১২ জানুয়ারি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদেন। এরপর গত ১ জানুয়ারি  ৫৯ বছর বয়স পূর্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে তিনি অবসরে যায়।অবসরের পরে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী চাকরিতে আরও ১ বছর পিআরএলে ।

পূর্ণ অবসরে না গিয়েই রাজনীতিতে মেজবাহ উদ্দিনের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে  বিশিষ্ট এক আইনজীবী বলেন, একজন সরকারি আমলা/ কর্মকর্তা অবসরের তিন বছরের মধ্যে কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।মহান জাতীয় সংসদে এনিয়ে  আইন পাস করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমলাদের রাজনীতিতে না আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের মতো লাভজনক পদে অংশ  না নেয়ার ব্যাপারে প্রকারান্তরে নিষেধ করা হয়েছে। 

পিআরএলে যাওয়ার পরই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়াকে বেআইনিও মনে করেন এই আইনজীবী। তাঁর মতে, যে ব্যক্তি সরকারি বেতন-ভাতা ও সুবিধা ভোগ করছেন, তিনি কীভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন? এটা আইন সমর্থন করে না।