চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল ভারত | সংবাদ চিত্র

চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল ভারত | সংবাদ চিত্র

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। রপ্তানি নিরুৎসাহিত করে নিজেদের মজুত বাড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। গত বৃহস্পতিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন ধরনের নন-বাসমতী চাল রপ্তানিতে এ শুল্ক আরোপ করে। আজ শুক্রবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

স্বাভাবিকের তুলনায় গড় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভারতের ধান উৎপাদনকারী প্রধান প্রধান রাজ্যে উৎপাদন কম হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশে ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ওইসব রাজ্য থেকে চালের রপ্তানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশের অর্থ মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।


বাংলাদেশের চাল আমদানির প্রধান উৎস দেশ ভারত। কারণ পার্শ্ববর্তী এই দেশ থেকে সড়কপথে দ্রুত চাল দেশে আনা যায়। পরিবহন খরচও কম। রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করার ফলে ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় চাল রপ্তানিকারক দেশের এ সিদ্ধান্তের ফলে অন্যান্য দেশেও দাম বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে চাল আমদানিতে বিপাকে ফেলবে বাংলাদেশকে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু খাদ্যপণ্য রপ্তানির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে ভারত সরকার।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন সমকালকে বলেন, ভারত থেকে জি টু জি পদ্ধতিতে ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৃহস্পতিবার আরও ৫০ হাজার টনের টেন্ডার হয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে সরকারি পর্যায়ে এই দেড় লাখ টন চাল আমদানি অনিশ্চয়তায় পড়ল। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতে আমদানিতে খরচ বাড়বে। তাতে সামগ্রিক আমদানি নিরুৎসাহিত হবে। তবে সরকার বিকল্প উৎস থেকে চাল আমদানির চেষ্টা করছে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতের আমদানি যাতে সহজ হয়, সে বিষয়েও পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বছর বাংলাদেশেও ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। আবার বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে যায়। যদিও সম্প্রতি দাম কিছুটা কমেছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার নিজে এবং বেসরকারি খাতের মাধ্যমে চাল আমদানির চেষ্টা করছে। এ জন্য চালের আমদানি শুল্ক আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ৬২ দশমিক ২৫ শতাংশ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালের আমদানি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয় আমদানির উদ্যোগও নিয়েছে। গত ৩১ আগস্ট সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ভারত থেকে ১ লাখ টন এবং ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন আতপ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি খাতে সারাদেশের প্রায় ৪০০ প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে কিছু চাল আমদানিও হয়েছে, যার সিংহভাগ এসেছে ভারত থেকে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে আমদানির উদ্দেশ্যে এলসি খুলেছে। ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে আগে এলসি খোলা চালে এই শুল্ক আরোপ হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আমদানিকারকরা।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম খান বলেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের আমদানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ অটো-মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ভারত শুল্ক আরোপ করায় আমদানি খরচ বাড়বে। বর্তমানে ভারতের বাজারে প্রতি টন চাল ৫২০ থেকে ৫২৪ ডলার। এর সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্ক যোগ হবে। ফলে আমদানি কমবে। আর এতে চালের দামও বেড়ে যাবে।

একই সংগঠনের আরেক সহসভাপতি এবং ঠাকুরগাঁওয়ের চাল মিল মালিক মাহমুদ এইচ রাজু  বলেন, ভারত রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করলে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়বে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। তবে সরকার যদি দেশে আমদানি শুল্ক কমিয়ে সমন্বয় করে, তাহলে প্রভাব পড়বে না। এখন চাল আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার।