নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস | সংবাদ চিত্র

নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে  ভোক্তাদের নাভিশ্বাস | সংবাদ চিত্র

চাল ডাল, তেল, মাছ-মাংস, সবজি সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া।

সরবরাহ থাকলেও প্রতিকেজি মোটা চাল কিনতে ক্রেতার ৫২-৫৫ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর ভালো মানের প্রতিকেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার উপরে।


এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম কমানো হলেও বাজারে তা অকার্যকর। নতুন করে কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। পাশাপাশি দাম বেশি হওয়ায় সবজি ও মাছে হাত ছোঁয়ানোই যেন দায়। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় ভোক্তা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি। অনেক পণ্য আছে, যা বাড়ার কথা নয়, সেগুলোও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময় একাধিক পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও তা অকার্যকর থেকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তদারকি সংস্থাগুলোর ভূমিকা কঠোর হওয়া দরকার। দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। একবার যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায়, তবে কেউ অসাধু পন্থায় দাম বাড়াতে ভয় পাবে। এতে পণ্যের দাম কমবে ও ক্রেতা স্বস্তি পাবে।

বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিলিটার পাম সুপার তেলের দাম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও শুক্রবার বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। এর আগে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৮ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৯০-১৯২ টাকা।

শুক্রবার এমন চিত্র সরকারি সংস্থা- ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকাতেও লক্ষ করা গেছে। বাজারে সব ধরনের সবজির জোগান ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও কেজিতে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। এ ছাড়া একাধিক সবজি ১০০ টাকা কেজির ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। প্রতিকেজি বেগুন কিনতে ক্রেতার ৮০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। প্রতিকেজি পটোল, ঢেঁড়স ও শসা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি। পাশাপাশি প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা এবং বরবটি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে শীতের সবজি শিম প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা।

বাজারে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা। খাসির মাংসের কেজি ৯০০-৯৫০ টাকা এবং প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি দাম ১৮০-১৮৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ১৭০ টাকা ছিল। আর প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন বলেন, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৭৫-৭৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা দুই সপ্তাহ আগে ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি করেছি। পাশাপাশি প্রতিকেজি নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৮৫-৮৬ টাকা, যা আগে ৭৮-৮০ টাকা ছিল। স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৫৪-৫৫ টাকা, যা আগে ৫০-৫২ ছিল।

এদিকে প্রজনন মৌসুম হওয়ায় শুক্রবার (৭ অক্টোবর) থেকে আগামী ২২ দিনের জন্য ইলিশ মাছ ধরা ও ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে বাজারে ইলিশ না থাকায় অন্যান্য মাছের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি কাতলা ও রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা, যা সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেশি। এছাড়া বাজারের কম দামের মাছ হিসাবে পরিচিত পাঙাশ মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি তেলাপিয়া বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকা, যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০-৩০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, পণ্যের এমন বাড়তি দামে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হতে হচ্ছে। বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ থাকলেও বিক্রেতারা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এমন ভাবে চলতে থাকলে খেয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ছে। তাই বাজারে যেসব সংস্থা তদারকি করে তাদের অভিযান বাড়ানো দরকার।

বিআইডিএসের রিসার্চ ফেলো ড. আজরিন কবির বলেন, ‘যে কোনো অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে ফেলছে। পরিস্থিতি এমন, যেন জবাবদিহিতার কোনো জায়গা নেই। তাই তদারকি জোরদার করে ব্যবসায়ী পণ্য কত দামে কিনল, কত দামে বিক্রি করছে তা সবার সামনে পরিষ্কার করতে হবে। কোনো অনিয়ম থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা যে কাজ করছে না তা নয়, তারা যথেষ্ট কাজ করছে। তবে এই কাজ ভোক্তার স্বার্থে আরও বাড়াতে হবে।’

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পণ্যের দাম ভোক্তা-সহনীয় রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। কারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের জানানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভোক্তা আইনের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা মামলা করছে। তিনি জানান, ভোক্তা স্বস্তি দিতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি ও অভিযান আরও জোরালোভাবে করা হচ্ছে। কোনো অসাধু ছাড় পাবে না।