মৌসুমেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ-সংবাদ চিত্র

মৌসুমেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ-সংবাদ চিত্র

এম আবু সিদ্দিক।।ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ। হিলি বন্দরে আমদানি বন্ধের খবরে চড়ছে পেঁয়াজের বাজার। রাজধানী ঢাকার পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে দাম। সপ্তাহের শুরুতেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। গতকাল বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায়।

বাজারে পেঁয়াজের কমতি না থাকলেও আমদানি বন্ধের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে এখন পেঁয়াজ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আবাদ বাড়ানোর মাধ্যমে এবার ভালো পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদনও হয়েছে। সেই পেঁয়াজ সবে বাজারে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এত কম থাকে যে দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। তাই কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে নতুন করে অনুমোদন (আইপি) না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের কৃষি বিভাগ মনে করছে, এখনই আইপি দিলে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন। আগামী বছর উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন কৃষক।

জানা গেছে, সরকার পেঁয়াজ আমদানির যে অনুমোদন দিয়েছিল, তার মেয়াদ ৫ মে শেষ হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ছয় দিন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। ফলে এপ্রিলের পর আর আমদানির পেঁয়াজ দেশে আসেনি। পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি চেয়ে ব্যবসায়ীরা নতুন করে আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।

ঈদের আগে যে ভারতীয় পেঁয়াজ ২৭ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে তা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। সেই সঙ্গে খাতুনগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য বড় পাইকারি বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দাম বাড়ছে রসুনেরও। ঈদের পর কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা। বড় রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬০ টাকা।

গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটি কাঁচাবাজারে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। এই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া বলেন, ভারতীয় পোঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। তাই দাম বেড়েছে।

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিয়াম স্টোরের মো. রমিজ উদ্দিন  বলেন, বাজারে এখন দেশি ও আমদানীকৃত পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। মূলত আমদানি বন্ধ থাকায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। এর ফলে খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে।

রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজি মো. মাজেদ  বলেন, গত ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। ঈদের আগের সপ্তাহে ২১ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম আর বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি নেই। এর পরও বাজারে দাম বেড়ে গেলে আবার আমদানির সুযোগ দিয়ে দেবে সরকার।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, আড়ত থেকে তাঁরা বেশি দামে কিনেছেন, তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, স্থলবন্দরের আশপাশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি সরকার নতুন করে পেঁয়াজ ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) না দেওয়ায় দাম বাড়ছে।

১০ মাসে সাড়ে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ এসেছে ভারত থেকে

আগে দেওয়া আমদানি অনুমতিপত্রের মেয়াদ ৫ মে শেষ হওয়ায় স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। সেই অজুহাতে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের ছুটির আগে এই পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি হয়েছিল কেজি ২৮ টাকা; ঈদের ছুটির পর বাজারে দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গেই দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়।

আমদানি বন্ধের খবরে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। খাতুনগঞ্জে ভালো মানের পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। চার দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২৯ টাকায়।

কিন্তু সরকারের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও চাইছে এখনই আইপি না দেওয়া হোক। বাজার পরিস্থিতি দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কারণ পেঁয়াজের সংকট হয় মূলত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে, যখন ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেশে পেঁয়াজ আসা জটিলতায় পড়ে। এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম; তাই বাজারে দাম বাড়ার সুযোগ নেই।

আইপি না বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের কেন্দ্রীয় পরিচালক রঞ্জিৎ কুমার পাল বলেন, ‘আপাতত সরকারের কাছ থেকে নতুন করে আইপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। নতুন সিদ্ধান্ত এলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারব।