ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রনে চার দিনের সফরে শেখ হাসিনা |সংবাদ চিত্র

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রনে চার দিনের সফরে শেখ হাসিনা  |সংবাদ চিত্র
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রনে চার দিনের সফরে শেখ হাসিনা  |সংবাদ চিত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামীকাল সোমবার ভারত যাচ্ছেন। এই সফরে বাণিজ্য, জ্বালানি, পানিবণ্টন, কানেক্টিভিটি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশটিতে শীর্ষ পর্যায়ের সফরটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতাস্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন, দুই দেশের স্টাফ কলেজের মধ্যে সহযোগিতা এবং বিচারবিভাগীয় সহযোগিতা নিয়ে এমওইউ। ভারতের উপর দিয়ে বাংলাদেশে পানিবিদ্যুৎ আমদানির জন্য নেপালের জিএমআর কোম্পানির সাথে এমওইউ সই হতে পারে। এ ছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ক সহযোগিতা এবং দুই দেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মধ্যে ইতঃপূর্বে সই হওয়া এমওইউগুলো নবায়ন হবে। এর বাইরে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের দু’টি এমওইউ নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তাচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে রয়েছে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন। আর এ বিষয়ে গত ২৫ আগস্ট দিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে ২০১১ সাল থেকে তিস্তার অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি ঝুলে আছে। মনু, ধরলা, খোয়াই, মুহুরি, গোমতী ও দুধকুমার- এই ছয়টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে রূপরেখা চুক্তির আলোচনা আগে থেকেই শুরু হয়েছে। জেআরসিতে আলোচনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ-সংক্রান্ত একটি এমওইউ সই করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই সফরে এমওই সই সম্ভব না হলেও বিষয়টি আলোচনায় থাকবে। এ ছাড়া সিলেটে পাঁচ হাজার একর জমি চাষাবাদের জন্য একটি সেচ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ জন্য কুশিয়ারা থেকে শুকনো মৌসুমে ১৫৬ কিউসেক পানি উত্তোলন করতে চায় বাংলাদেশ। ভারতও সমপরিমাণ পানি উত্তোলন করবে। এ ব্যাপারে একটা খসড়া এমওইউ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ-সংক্রান্ত এমওইউ সই হতে পারে। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে। এই অভিন্ন নদীর পানি সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য একটি যৌথ সমীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় সমীক্ষার বিষয়টি আসতে পারে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা) সইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা শেষে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা, পাট রফতাানির ওপর ভারতের আরোপিত ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্ক অপসারণের প্রসঙ্গগুলো তুলবে ঢাকা।
শীর্ষ পর্যায়ের এই সফরে জ্বালানি সহযোগিতা গুরুত্ব পাবে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন’ নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। বর্তমানে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের গুয়াহাটির নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে রেলযোগে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে হাইস্পিড ডিজেল আসছে। মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণকাজ শেষ হলে আরো নিরবচ্ছিন্নভাবে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমে এসেছে। সীমান্তে নিরস্ত্র লোকজনের হত্যা পুরোপুরি বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ জোর দেবে। এ ছাড়া মানব, মাদক ও সব ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। তবে এই ঋণের অর্থ ঠিক কিভাবে ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগে যায়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফরে এলে এই ঋণ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অবশেষে ঋণের অর্থ সরবরাহের জন্য ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক গত ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ 

সশস্ত্রবাহিনীর সাথে চুক্তি করে। এই চুক্তির আওতায় ভারত থেকে আর্মাড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) ও বড় আকারের ট্রাক কেনার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গত আগস্টে দিল্লিতে অনুুষ্ঠিত দুই দেশের প্রতিরক্ষা সংলাপে যৌথভাবে সমরাস্ত্র উৎপাদনসহ সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সহযোগিতার এই বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে আলোচনা হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এ সময় তাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি পৌঁছাবেন। এ দিন দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভারতীয় অতিথিদের সাথে তিনি সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন ৬ সেপ্টেম্বর দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠকে শেষে এমওইউগুলো সই হবে। এরপর তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ৭ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। একই দিন বিকেলে আজমির শরিফে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির মাজার জিয়ারত করবেন তিনি। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর জয়পুর শহর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।