বাংলাদেশের সরকারি ওষুধ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে!

s c

বাংলাদেশের সরকারি ওষুধ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে!

সংবাদ চিত্র ডেস্কঃ বাংলাদেশে সরকারি যে ওষুধ ক্রয় ও বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, সেই ওষুধ  ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি সরকারি হাসপাতালে কিভাবে গেল এনিয়ে তোলপাড়।

ভারতের একটি  হাসপাতালের বহিঃবিভাগ থেকে রোগীদের এমন ওষুধ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যটির পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমা  সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। 

উক্ত হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারাই নাকি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ধরে এভাবেই বাংলাদেশের ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছেন। ‘ডক্সিসাইক্লিন’ নামে ওই ক্যাপসুলের পাতার ওপরই লেখা রয়েছে-‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ, ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয়’। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটি হল বগুড়ার এসেনসিয়াল ড্রাগস কোং লি.। এই ওষুধটি মূলত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের চিকিৎসা করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পরে গেছে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। কিভাবে বাংলাদেশ সরকারি ওষুধ অন্য রাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যের হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। তা অবিলম্বে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে প্রায়শই বলতে শোনা যায় যে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরা, ওড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড থেকে সেখানকার বাসিন্দারা এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও রোগীরা কলকাতায় এসে সরকারি চিকিৎসা গ্রহণ করেন বলেও জানিয়েছিলেন মমতা। সেখানে কিভাবে বাংলাদেশ সরকারের অবিক্রয় যোগ্য ওষুধ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে বিতরণ করা হচ্ছে? সেই প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ সামনে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলা প্রশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি জানান, বিষয়টি সামনে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের তরফে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কিভাবে ওই ওষুধ এখানকার হাসপাতালের স্টোরে এসে পৌঁছালো তা দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

যদিও সূত্রে খবর, সরকারিভাবেই কলকাতার স্টোর থেকে নাকি ওই ওষুধ জেলা হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসক দেখানোর পর রোগীরা স্টোরে বিনামূল্যের ওষুধ সংগ্রহ করতে গেলে সেখান থেকে দেওয়া হচ্ছিল বাংলাদেশি ওষুধ। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক অনির্বাণ চৌধুরীর এমন একটি প্রেসক্রিপশনই এদিন ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে উল্লেখিত ‘ডক্সিসাইক্লিন’ ক্যাপসুল আদতে একটি বাংলাদেশি ওষুধ। 

এদিকে, বিষয়টি সামনে আসতেই রাজনৈতিক ভাবেও একে কাজে লাগাতে মরিয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, এ ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। ভারত যেখানে সারা বিশ্বে ওষুধ রপ্তানি করে, সেখানে কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সরকারি স্টোরে বাংলাদেশি ওষুধ আসলো, তার প্রকৃত কারণ জানতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও দাবি করেছেন তিনি। ওই ওষুধ বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে এসেছে নাকি অবৈধভাবে তা জানা প্রয়োজন বলে মনে করেন শুভেন্দু।

যদিও একটি সূত্র বলছে, ভারতে করোনার দ্বিতীয় আছড়ে পড়ার সময় বাংলাদেশ সরকারের তরফে একটা বিশাল পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। সেই ওষুধের একটা বড় অংশ ছিল রাজ্যের মেডিসিন স্টোরে। ভুলক্রমে সেই ওষুধও পাঠানো হতে পারে ওই হাসপাতালে।