৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী -সংবাদ চিত্র

৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী -সংবাদ চিত্র

করোনা-পরবর্তী উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়কালে ভর্তুকি ও সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা আগের বছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে চতুর্থ, আওয়ামী লীগ সরকারের ২২তম ও বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট।

৯ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী।
‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক কার্যক্রম চাঙা করার বাজেট প্রস্তাব রাখবেন অর্থমন্ত্রী।

আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। এনবিআর ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পাচ্ছে। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৯ দশমিক ৫ শতাংশ)। সে হিসাবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে।

শতকরা হিসাবে তা ১২ শতাংশ বেশি। তবে জিডিপির হিসাবে ১ শতাংশের বেশি কমছে লক্ষ্যমাত্রা।
চলতি বাজেটে এনবিআরবহির্ভূত (ননএনবিআর) ও করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব আছে। বাজেটে মোট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট মোকাবিলায় প্রথমবারের মতো সরকারের ব্যাংক ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আসন্ন বাজেটে ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে ব্যয় হবে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
ব্যয়ের তারতম্যের কারণে নতুন বাজেটে ঘাটতি বাড়লেও তা জিডিপির ৫-এর ঘরেই থাকছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

আগামী বাজেটের রূপরেখায় চলতি অর্থবছরের তুলনায় সরকারের পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়ছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সেই অনুপাতে বাড়ছে না বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ। এ ক্ষেত্রে চলতি বছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ২০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
ব্যয়ের তারতম্যের কারণে নতুন বাজেটে ঘাটতি বাড়লেও তা জিডিপির ৫-এর ঘরেই থাকছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

আগামী বাজেটের রূপরেখায় চলতি অর্থবছরের তুলনায় সরকারের পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়ছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সেই অনুপাতে বাড়ছে না বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ। এ ক্ষেত্রে চলতি বছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ২০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

জিডিপির আকার বাড়ছে : আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার বাড়ানো হচ্ছে। প্রাক্কলিত আকার ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগ আসবে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল (সংশোধিত) ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।