সরকারি পেনশনভোগীদের সুযোগ সুবিধা বাড়ছে | সংবাদ চিত্র

সরকারি পেনশনভোগীদের সুযোগ সুবিধা বাড়ছে | সংবাদ চিত্র

অবসরে যাওয়া সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা বাড়ছে। জটিল রোগে আক্রান্তরা তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যয় চালানোর জন্য অবসরজীবনেও সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অনুদান পাবেন। তারা দেশে বা বিদেশে এ টাকা খরচ করতে পারবেন। এ ছাড়া কর্মরত কর্মচারীদের মতো অবসরপ্রাপ্তদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুদানও বেড়ে তিনগুণ হচ্ছে।


কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের এসব আর্থিক প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেছেন।

বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের (বিকেকেবি) মহাপরিচালক (সচিব) ড. নাহিদ রশীদ বলেন, ‘বর্তমান আইন অনুযায়ী শুধু কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মজীবনে এক বা একাধিকবারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা চিকিৎসা অনুদান পান। অবসরপ্রাপ্তরা পান না। অথচ বাস্তবতা চিন্তা করলে অবসরপ্রাপ্তদেরই অগ্রাধিকারভিত্তিতে এ সুবিধা পাওয়ার কথা। কারণ অবসরের পর নানাবিধ জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এসময় অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করেন। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আইন সংশোধন করে অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা জটিল রোগে আক্রান্ত হবেন তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচ চালানোর জন্যও অনুদান দেওয়া হবে। 


ড. নাহিদ রশীদ জানান, এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া করা হয়েছে, চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।

সরকারের সাবেক ও বর্তমান সব কর্মচারীর সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সরকারি কর্মচারী কল্যাণ অধিদপ্তর ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে (কল্যাণ তহবিল ও যৌথবীমা তহবিল) এক করে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড গঠন করা হয়।


এই বোর্ড কর্মচারীদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে স্টাফ বাস সার্ভিস, চিকিৎসাসেবা, নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অন্যতম। বোর্ড কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, মাসে মাসে কল্যাণ ভাতাও দেয়।
বেসামরিক খাতে সরকারের প্রায় ১৩ লাখ কর্মচারী এসব সুবিধা ভোগ করেন। তাদের সঙ্গে আছেন অবসরপ্রাপ্ত আরও প্রায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার কর্মচারী।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনে বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্তদের বা পেনশনারদের চিকিৎসা অনুদান দেওয়ার বিধান রাখা উচিত। কিন্তু টাকার পরিমাণ আইনে উল্লেখ না থাকাই ভালো। কারণ একসময় মনে হবে দুই লাখ টাকা খুবই কম। তখন সরকার ইচ্ছা করলেও বেশি টাকা দিতে পারবে না। তখন বাধ্য হয়ে আইন পরিবর্তন করতে হবে। আর এদেশে আইন পরিবর্তন খুবই জটিল বিষয়। মাঠপর্যায়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাদের প্রস্তাব নিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অধিদপ্তর যাচাই-বাছাই করতেই বছরের পর বছর পার করে দেয়। অধিদপ্তর থেকে সেটা যখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যায় তখন আরও কয়েক বছর ফাইলবন্দি হয়ে থাকে। দফায় দফায় তাগাদা দিয়ে আইন সংশোধনীর ফাইল ওঠাতে হয়। তারপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মতামতনানা আনুষ্ঠানিকতা করতে করতে আরও কয়েক বছর পার হয়ে যায়। তাই চিকিৎসার জন্য কত টাকা দেওয়া হবে সেটা আইনে না রেখে বিধিমালায় রাখা উচিত। বিধিমালা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে যেকোনো সময় বদলাতে পারে।  


কর্মচারীরা বর্তমানে চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা অনুদান পান। আর অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পান ১০ হাজার টাকা। মৃত্যুজনিত সৎকারের খরচ সবার জন্য একই রকম হওয়ায় খসড়া আইনে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্যও ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে।

বিকেকেবির একজন কর্মকর্তা জানান, কল্যাণ বোর্ডের নামে বহু সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগালে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মানবেতর জীবনযাপনের কোনো কারণ নেই। কিন্তু সেসব সম্পদ কাজে লাগিয়ে দেশের লাখ লাখ মানুষের উপকারে আসার মতো কাউকে পাচ্ছেন না তারা।