বিদ্যুতে আলোকিত পদ্মা সেতু:বছরে টোল আসবে ১৬শ কোটি টাকা-সংবাদ চিত্র

বিদ্যুতে আলোকিত পদ্মা সেতু:বছরে টোল আসবে ১৬শ কোটি টাকা-সংবাদ চিত্র

আজ  সোমবার বিকাল  সাড়ে পাঁচটার দিকে বিদ্যুৎ-সংযোগের মাধ্যমে মাওয়া প্রান্তের ল্যাম্পপোস্টে একসঙ্গে ২০৭টি বাতি জ্বালানো হয়। মাওয়া প্রান্তের সবকটি ল্যাম্পপোস্টে এই প্রথম বাতি জ্বলল। প্রথম আলো

এর আগে ৪ জুন বিকেলে পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। ওই দিন সেতুর ১৪ থেকে ১৯ নম্বর পিলারের মাঝামাঝিতে ২৪টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। এরপর ১১ জুন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে সেতুর সব কটি বাতি জ্বালানো হয়। তখন সেতুতে জেনারেটরের মাধ্যমে বাতি জ্বালানো হয়েছিলো। জাগোনিউজ ২৪

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের বলেন, মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে এই প্রথম মাওয়া প্রান্তের ২০৭টি ল্যাম্পপোস্টে পরীক্ষামূলকভাবে বাতি জ্বালানো হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার জাজিরা প্রান্তের বাতিগুলো বিদ্যুৎ-সংযোগের মাধ্যমে জ্বালানো হবে। এরপর সম্পূর্ণ সেতুর বাতিগুলো একসঙ্গে জ্বালানো হবে। সম্পূর্ণ সেতুর বাতি একসঙ্গে জ্বালাতে আর ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে।

তিনি বলেন, যেহেতু উদ্বোধনের আগে সেতুতে গাড়ি চলবে না। তাই বাতি জ্বালানো বিদ্যুতের অপচয় হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভায়াডাক্টে প্রথম ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয় ১৮ এপ্রিল। 

এর আগে ২৪ মে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিলারে সেতুর সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়। শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে ৮০ কিলোওয়াট ও মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে দেয়া আরও ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুতে সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হবে। 

২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। ২৬ জুন সকাল থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে চলেছে।

পদ্মা সেতুতে বছরে টোল আসবে ১৬শ কোটি টাকা----

--পদ্মাসেতু থেকে প্রতি মাসে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রতিবছর পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হবে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও নির্মাণ খরচের ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। কোনো উন্নয়ন সহযোগী বা প্রতিষ্ঠানকে নয়, স্বয়ং বাংলাদেশ সরকারকে ৩৫ বছরে সুদসহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মিত হয়েছে। এর পুরোটাই সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেছে। চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ মোতাবেক ঋণের অর্থ প্রকল্প সমাপ্তির পর বার্ষিক ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে ১৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া নকশা প্রণয়নের সময় নেওয়া ২১১ কোটি টাকার বিপরীতে ৩৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে ।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। আগামী ৩৫ বছরে সরকারকে সুদে আসলে ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ঋণ পরিশোধ, সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, নদীশাসন এবং আদায়কৃত টোলের ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধ করার জন্য টাকা প্রয়োজন। এসব টাকা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনের উপর টোল আরোপ করে উঠানো হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ফেরি পারাপারের বিদ্যমান টোল হারকে ভিত্তি ধরে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির মাধ্যমে মাওয়া-জাজিরা রুটে ফেরিতে বর্তমানে চলাচলকারী যানবাহনের (নভেম্বর ২০২০ এর তথ্য অনুযায়ী) আদায়কৃত টোল হার অনুযায়ী মাসে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বছরে ৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা আদায় হয়। এর দেড়গুণ হলে মাসে ৮ কোটি ৬৫ লাখ।