ইলিশ নিষেধাজ্ঞা ৬৫ দিন দরকার আছে কি-না | সংবাদ চিত্র

ইলিশ নিষেধাজ্ঞা  ৬৫ দিন দরকার আছে কি-না | সংবাদ চিত্র
ইলিশ নিষেধাজ্ঞা  ৬৫ দিন দরকার আছে কি-না | সংবাদ চিত্র

 ইলিশ নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৬৫ দিন দরকার আছে কি না, তা বৈজ্ঞানিকভাবে বিচারবিশ্লেষণ করে দেখা উচিত। কারণ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ১৫ এপ্রিল থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত। দেশে এ সময়সীমা ১ মে থেকে ৩০ জুন করা হলে তা বেশি কার্যকর হতে পারে কি না, তা–ও বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন।
গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। সাগরের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা মেয়াদ শনিবার শেষ হয়েছে। কিন্তু এর আগ থেকেই চরফ্যাশনের উপকূলের জেলেরা সাগরের মাছ শিকার করতে শুরু করেছেন। ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজার গেলেই দেখা যায়, সাগরের মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। নদীতে যে ইলিশ পাওয়া যায় তা দেখতে অনেকটা রুপালি ও সাদা , আর বাজারে এখন যে ইলিশ পাওযা যাচ্ছে, তা দেখতে একটু লম্বা পাতলা ও লালচে। এতে দেখলেই বোঝা যায় এগুলো সাগরের মাছ। তা হলে প্রশ্ন থেকে যায়, যদি নিষেধাজ্ঞা সাগরের থেকেই থাকে, তবে এই মাছ বাজারে এলো কী করে। বাজারে মাছগুলো দেখলেই বোঝা যায়, চরফ্যাশনের উপকূলের জেলেরা এতদিন সরকারের দেওয়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মানেননি। সাগরে নেমে অবাধে মাছ ধরেছেন। 

অন্যদিকে চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিসসূত্র থেকেও প্রমাণিত হয়, নিষেধাজ্ঞা মেয়াদকালে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এবার নিষেধাজ্ঞা মেয়াদ চলতি মাসের ২৩ জুলাই শেষ দিন পর্যন্ত উপজেলার নদ নদীতে ৩১টি অভিযান পরিচালনা করে ১৭টি মাছ ধরার ট্রলার আটক করেছে    এবং মামলা হয়েছে ১৭টি। 

এখন সহজেই বলা যায়, নিষেধাজ্ঞা মেয়াদকালে জেলেরা সাগর-নদীতে মাছ ধরতে না গেলে অভিযানের নামে ট্রলার ট্রলার আটক হলো কেন? আর মামলাই বা হলো কাদের বিরুদ্ধে। এখানকার প্রকৃত রূপ হলো— জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো চরফ্যাশন উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা মানার পরিবেশ নেই।

তা ছাড়া দেশের উপকূলীয জেলা কক্সবাজার, পটুযাখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম এগুলো হচ্ছে সাগরপাড়ের জেলা। কিন্তু ভোলা জেলা সাগর পাড়ের জেলা নয়। ভোলা জেলার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশন থেকে যেখানে মাছ শিকার করতে জেলেরা যায়, তার দূরত্ব প্রায় দুই থেকে আড়াইশ কিলোমিটার। উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত দূরে গিয়ে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা সময় যারা সরকারের আইন অমান্য করে সাগরের মাছ শিকার করেন, তাদের নিযন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। উপজেলা মৎস্য বিভাগ, প্রশাসনের সেসব ক্ষমতা নেই তা ছাড়া সাগরের ছোটখাটো নৌযান নিয়ে যাওযা সম্ভব নয়। সাগরে যেতে যে নৌযান প্রয়োজন তা জেলা উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের নেই। কোস্টগার্ডের আছে তা সংখ্যা খুবই কম। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার প্রশাসনের চোখে ধুল দিয়ে ৬৫দিন জেলেরা সাগরে অবাধে মাছ শিকার করেছে। এখনো করছে যদিও ২৩ জুলাই তারা নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যাওয়ার কথা। ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞাটি চরফ্যাশনের উপকূলের জেলেদের জন্য একেবারে ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। কোনো বছরেই এটা ফলপ্রসূ হয় না। প্রশাসক ক্ষমতা বৃদ্ধি না করে সরকার এখানে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন চরফ্যাশনের উপকূলের জেলেরা। জেলেদের ধারণা এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর যদিও সাগরে মাছ পাওযার কথা ছিল যেহেতু তারা ৬৫ দিন অবাধে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করছে সাগরে নদীতে সেই জন্য এবার খুব একটা আশানুরূপ মাছ পাবে বলে আশা করছেন না। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীতে প্রায় সারা বছরই নিষেধাজ্ঞা, অভিযান, অবৈধ জাল ও জেলের সংখ্যা বৃদ্ধি, একটু পরপর ডুবোচর, সাগর মোহনায় চরের কারণে নদীতে মাছ কমে গেছে। মাছ যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে তেলখরচ উঠছে না।