সাভারে স্টাম্প দিয়ে শিক্ষক কে পিটিয়ে হত্যা: অভিযুক্ত জিতু গ্রেপ্তার | সংবাদ চিত্র

সাভারে  স্টাম্প দিয়ে শিক্ষক কে পিটিয়ে হত্যা: অভিযুক্ত জিতু গ্রেপ্তার | সংবাদ চিত্র
সাভারে শিক্ষক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত জিতু
সাভারে  স্টাম্প দিয়ে শিক্ষক কে পিটিয়ে হত্যা: অভিযুক্ত জিতু গ্রেপ্তার | সংবাদ চিত্র

সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতুকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ডিবিসি টিভি

বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাত পৌনে ৮টার দিকে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রের বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে বুধবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলার আসামি ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আজ ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘সকালে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি জিতুকেও গ্রেপ্তারে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক বলেন, ‘ওই শিক্ষক মারা যাওয়ার দিন গত রোববার তার বড় ভাই অসীম কুমার সরকার অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুকে প্রধান করে হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামা অনেককেই আসামি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন। ওই মামলায় প্রধান আসামির বাবাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’

নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। ছবি: সংগৃহীত
গত শনিবার দুপুরে সাভারের চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে কলেজের প্রভাষক উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র জিতুর বিরুদ্ধে।

পিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়া শিক্ষক উৎপল পরদিন মারা যান। এ ঘটনায় উৎপলের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় জিতুকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনের নামে হত্যা মামলা করেন।

জিতু দশম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স ১৯ বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, এই তরুণ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সেখান থেকে ঝরে পড়ার পর এই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়।

কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘জিতু ক্লাস নাইনে আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকার একটা মাদ্রাসায় পড়ত। সে ছাত্র হিসেবে খুবই দুর্বলপ্রকৃতির। উচ্ছৃঙ্খলও। তার বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়েরও অভিযোগ ছিল।’

উৎপলের ওপর কীসের ক্ষোভ জিতু?

কলেজের সামনের মার্কেটের মালিক ইমান উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসল ঘটনা এখনও কলেজের শিক্ষকরা বলছেন না। তবে আস্তে আস্তে সব বেরিয়ে আসবে।

‘জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার মাজেদ নামে এক ব্যক্তি। তাদের হোটেল ব্যবসা আছে। সেই মাজেদের শ্যালিকা এই কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ে। তার সঙ্গে জিতুর আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক।

‘কিছুদিন আগেও স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও সেই মেয়েকে দেখার পর শিক্ষক উৎপল তাদের শাসন করেন। ওই মেয়ের পরিবারকে তিনি ফোন করে সব জানিয়ে সতর্কও করেন। মেয়েটা জিতুকে এসব বিষয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়েই ওই স্যারকে পিটিয়েছে।’

ইমান উদ্দিনের তথ্য বলছে, জিতু এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে খেলার আগের দিন থেকেই কলেজের বাইরে স্টাম্প নিয়ে ঘুরছিল।

তিনি জানান, সেদিন জিতুর সঙ্গে আরও তিনজন ছিল। পেটানোর পর চারজন একসঙ্গে হেঁটে চলে যায়।

একই কথা জানান ওই কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইম ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘স্যার সেই মেয়ের বাসায় ফোন করে শক্তভাবে বিচার দিয়েছিলেন যেন মেয়েটা জিতুর সঙ্গে না মেশে। এটার ক্ষোভ থেকেই জিতু স্যারকে খেলার দিন পিটিয়েছে।’

কলেজের হিসাবরক্ষক পারুল আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্কুলের একটি কক্ষে জিতু ও মেয়েটাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেভাবে বিস্তারিত জানি না। মেয়েটা আমাদের কলেজের এক শিক্ষকের ছোট বোন। এর বেশি আর কিছু জানি না আমি।’

সিসিটিভি ফুটেজে কিছুই নেই

কলেজের সিসিটিভি ফুটেজেও হামলার আগে জিতুর নানা কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে। তবে ঘটনার সময়কার কিছুই রেকর্ড হয়নি।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনার সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ফুটেজ রেকর্ড হয়নি। সে সময় কলেজের বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পেছনে জিতুর হাত আছে বলেই বিশ্বাস তাদের।

কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, ‘উৎপল কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান ছিলেন। তাই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তিনি হয়তো শাসন করেছিলেন। তবে ঠিক কোন বিষয়টা, সেটা আমার জানা নেই। আর ওই দিনের ফুটেজের বিষয়টা হলো, আমরা হঠাৎ করে দেখি কারেন্ট চলে গেছে। কিন্তু তখন আশপাশে সব জায়গায় কারেন্ট ছিল। ঘটনার পর পরই আমরা  বুঝতে পারি, সে (জিতু) পরিকল্পিতভাবেই বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করেছে।’

নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানী গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। ৩৫ বছর বয়সী এই শিক্ষক প্রায় ১০ বছর ধরে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকতা করছেন।