দেশ রুপান্তরের সম্পাদক অমিত হাবিব আর নেই | সংবাদ চিত্র

দেশ রুপান্তরের সম্পাদক অমিত হাবিব আর নেই | সংবাদ চিত্র

আশির দশকে যখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তুমুল সাড়া জাগিয়েছে রাজপথে, গ্রামে-গঞ্জে-মাঠে-ক্ষেতে, তখন অমিত হাবিব লিখতেন লিটলম্যাগে। ‘একজন মানুষ আনো’ কবিতায় তিনি লিখেছিলেন, ‘শুধু স্বাধীনতা শব্দটি বিশুদ্ধ উচ্চারণ/করতে পারে উদাত্ত গলায়/তেমন একজন মানুষ’। নিভৃতচারী অমিত হাবিব বাংলাদেশের আধুনিক সাংবাদিকতার অন্যতম পুরোধা। আড়ালে থাকা সাংবাদিক গড়ার সেই কারিগরের ৩৬ বছরের কলম থেমে গেল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে।

রাত ১১টায় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।

তিন যুগে দেশ-বিদেশে ১০টি গণমাধ্যমে সাংবাদিকতার পর থেমে গেল নিভৃত থাকা এই সাংবাদিকের জীবনপ্রদীপ। অমিত হাবিবের হাত ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অসংখ্য সাংবাদিকের পথচলা শুরু হয়। সব সময় আড়ালে থাকতে পছন্দ করতেন, নিজেকে আলোচনায় রাখা পছন্দ ছিল না তার। নেপথ্যে থেকে অসংখ্য সাংবাদিক যেমন তৈরি করেছেন, তেমনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নতুন ধরনের সাংবাদিকতায় তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, কো-চেয়ারম্যান ও দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুলসহ রূপায়ণ গ্রুপের পরিচালক এবং কর্মকর্তারা অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

 
আশির দশকে যখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তুমুল সাড়া জাগিয়েছে রাজপথে, গ্রামে-গঞ্জে-মাঠে-ক্ষেতে, তখন অমিত হাবিব লিখতেন লিটলম্যাগে। ‘একজন মানুষ আনো’ কবিতায় তিনি লিখেছিলেন, ‘শুধু স্বাধীনতা শব্দটি বিশুদ্ধ উচ্চারণ/করতে পারে উদাত্ত গলায়/তেমন একজন মানুষ’। নিভৃতচারী অমিত হাবিব বাংলাদেশের আধুনিক সাংবাদিকতার অন্যতম পুরোধা। আড়ালে থাকা সাংবাদিক গড়ার সেই কারিগরের ৩৬ বছরের কলম থেমে গেল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে।

রাত ১১টায় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।

 
তিন যুগে দেশ-বিদেশে ১০টি গণমাধ্যমে সাংবাদিকতার পর থেমে গেল নিভৃত থাকা এই সাংবাদিকের জীবনপ্রদীপ। অমিত হাবিবের হাত ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অসংখ্য সাংবাদিকের পথচলা শুরু হয়। সব সময় আড়ালে থাকতে পছন্দ করতেন, নিজেকে আলোচনায় রাখা পছন্দ ছিল না তার। নেপথ্যে থেকে অসংখ্য সাংবাদিক যেমন তৈরি করেছেন, তেমনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নতুন ধরনের সাংবাদিকতায় তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ।


অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, কো-চেয়ারম্যান ও দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুলসহ রূপায়ণ গ্রুপের পরিচালক এবং কর্মকর্তারা অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।


 
৩৬ বছরের কলম থেমে গেল মধ্যরাতে: যখন রাত ১১টায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অমিত হাবিবের মৃত্যুর তথ্য জানাচ্ছিলেন, তখন তার সাংবাদিকতার সময় পার হয়েছে তিন যুগ বা ৩৬ বছর ৬ মাস। শুরুটা হয়েছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৬ সালে। মাসিক উন্মেষ, সাপ্তাহিক , আজকের কাগজ হয়ে ভোরের কাগজে যোগ দেন ১৯৯২ সালে। একসময়ের পাঠকনন্দিত ভোরের কাগজে ১৯৯৮ সালে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর ২০০৩ সালে যোগ দেন দৈনিক যায়যায়দিনে। তারপর ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের পেইচিংয়ে যান, সেখানে তিনি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালে (সিআরআই) যোগ দেন। সিআরআইতে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করেছেন। এরপরই তিনি দেশে ফিরে যোগ দেন সমকালে, এখানে তিনি প্রধান বার্তা সম্পাদকের পদে কাজ করেছেন।

এরপর ২০০৯ সালের নভেম্বরে অমিত হাবিব কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তিনি সেখানে উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৭ সালে সম্পাদক হিসেবে তিনি দেশ রূপান্তরে যোগ দেন। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে দেশ রূপান্তর। অল্প সময়ের মধ্যে পত্রিকাটি পাঠকের মধ্যে সাড়া ফেলে।

নির্মোহ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ছিল অমিত হাবিবের মূল্য লক্ষ্য। প্রিন্ট মিডিয়া যখন মরতে বসেছে, ডিজিটাল ও অনলাইন সাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় প্রতিদিনই কমছে দৈনিক পত্রিকার ছাপার সংখ্যা। অমিত হাবিব তাঁর সহকর্মীদের বলতেন, একমাত্র সুসাংবাদিকতা, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাই পারে দৈনিক পত্রিকাকে বাঁচিয়ে রাখতে।
অমিত হাবিবের জীবন ও কর্ম: অমিত হাবিব ১৯৬৩ সালের ২৩ অক্টোবর ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাজিরবেড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খন্দকার ওয়াহেদুল হক। গত বছরের ৩ নভেম্বরে মারা যান অমিত হাবিবের মা শামসুন নাহার বকুল। এর আগে প্রয়াত হন তার বাবাও, যিনি মহেশপুর উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওয়াহেদুল হকের তিন সন্তানের মধ্যে অমিত হাবিব ছিলেন সবার বড়। তার অপর দুই ভাই ফয়জুল হাবিব ও মেহেদি হাসান।  

যশোর এমএম কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন অমিত হাবিব। তখন থেকে লেখালেখিতে যুক্ত হন তিনি। সে সময় বিচিন্তা, পূর্বাভাস, প্রিয় প্রজন্ম পত্রিকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক, অনুষ্ঠানের সমালোচনা, রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখে বেশ জনপ্রিয়তা পান। তিনি লিটলম্যাগে লেখালেখি করতেন। সে সময় তার বেশ কিছু লেখা কবিতাও ছাপা হয়।
গত ২১ জুলাই দেশ রূপান্তর অফিসে অসুস্থ হয়ে পড়লে অমিত হাবিবকে প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে, পরে বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন খানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিআরবি হাসপাতাল থেকে তাকে ২৫ জুলাই রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 অমিত হাবিবের হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়েছিল। তাঁর রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।