তথ্য গোপন করে চরফ্যাশনে তিন মাদ্রাসার সুপার নিয়োগ | সংবাদ চিত্র

তথ্য গোপন করে চরফ্যাশনে  তিন মাদ্রাসার সুপার নিয়োগ | সংবাদ চিত্র

জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার তথ্য গোপন করে সদ্য এমপিওভুক্ত ভোলার চরফ্যাশনের তিন মাদ্রাসার সুপার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬ জুলাই-২০২২, ঘোষিত এমপিওভুক্তির তালিকায় চরফ্যাশনে ৪ মাদ্রাসা অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মধ্যে তিন মাদ্রাসায় নিয়োগ নীতিমালা বহির্ভূত সুপার নিয়োগ হয়। এসব মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময় যারা কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী ছিলেন তাদের অধিকাংশ বঞ্চিত হয়েছে। 

সদ্য ঘোষিত এমপিওভুক্তির তালিকায় চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর ফ্যাশন আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা, হাসানগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা, হাজারীগঞ্জ মোহাম্মদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা ও কুকরি মুকরি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

ব্যাংক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর ফ্যাসন আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার নিয়োগপ্রাপ্ত সুপার মো. মোসলেহ উদ্দিন একই উপজেলার হাসানগঞ্জ হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী পদে কর্মরত আছেন। যার ইনডেক্স নম্বরঃ বি৪৭১০৩৮, তার ব্যাংক হিসাব নম্বর ৮৮০১। রূপালী ব্যাংক জিন্নাগড় শাখার তথ্য মোতাবেক তিনি জুলাই-২০২২ পর্যন্ত বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। 

হাসানগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার নবনিযুক্ত সুপার আবু ইকবাল মোহাম্মদ ন‚র হোসাইন চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক শরীরচর্চা পদে কর্মরত আছেন। যার ইনডেক্স নম্বর বি৩৭৪৪৪৯, তার ব্যাংক হিসাব নম্বর ৮৪০০। রূপালী ব্যাংকের তথ্যমতে তিনি  আগস্ট-২০২২ পর্যন্ত প‚র্ববর্তী মাদ্রাসার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। 

হাজারীগঞ্জ মোহাম্মদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার নবনিযুক্ত সুপার মো. রুহুল আমিন তজুমুদ্দিন উপজেলার মোহাম্মদ ভেলা ওমর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। যার ইনডেক্স নম্বর বি০৭৮১৬৩। তার ব্যাংক হিসাব নম্বর ৫৩০৬০১১০০০৮০৮ মতে তিনি আগস্ট ২০২২, মাসের বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। 

জিয়াউল হক জানান, তিনি ২০০৮ সাল থেকে হাজারীগঞ্জ মোহাম্মদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। এই পদে অন্য একজনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। 

একই মাদ্রাসার মোঃ শফিউল্যাহ অভিযোগ করেন ১৯৯৪ সাল থেকে এবতেদায়ী ক্বারী হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে আমাকে বাদ দিয়ে ক্বারী পদে আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একই ভাবে ওই মাদ্রাসার সুপার তার ছেলেকে সহ-সুপার পদে এবং মো. অলিউল্যাহ সেলিম কে সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ দিয়েছে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায় উত্তর ফ্যাশন আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোঃ সোহাগ ২০০৪ সাল থেকে অত্র মাদ্রাসায় কর্মরত ছিলেন। একই মাদ্রাসার মোঃ আব্দুল মালেক সহ-সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। এদেরকে বাদ দিয়ে সহ-সুপার পদে ও অফিস সহকারী পদে অন্যদেরকে নতুন ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুনদের এমপিওভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারগণ আবেদন করেছেন। 

হাজারীগঞ্জ মোহাম্মদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শরিফ মোঃ আব্দুল কাদের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান), রুবায়েত হোসেন ও শরীর চর্চা শিক্ষক আফসার উদ্দিন অভিযোগ করেন তারা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এমপিও ঘোষণার আগে কর্মরত থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধির সীল স্বাক্ষর ও নিয়োগ কমিটির কাগজপত্র জালিয়াতি করে নিয়োগ প্রদান করে এমপিও ভুক্তির জন্য চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।


২০১৮ সালের বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ নীতিমালা মোতাবেক বিধিমালা সুপার হতে হলে সহ-সুপার পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ  ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে আসতে হলে পূর্বের চাকরি থেকে গৃহীত সমুদয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়ে বিধি মোতাবেক নিয়োগ নিতে হবে। এসব নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে উপজেলার উত্তর ফ্যাশন আদর্শ দাখিল মাদ্রাসায় সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন মো. মোসলেহ উদ্দিন একইভাবে নিয়োগ জালিয়াতি করে উপজেলার হাসানগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা ও হাজারীগঞ্জ মোহাম্মদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন শরীর চর্চা শিক্ষক আবু ইকবাল মো. নুর হোসেন ও জুনিয়র শিক্ষক মো. রুহুল আমিন। এসব নিয়োগ জনবল কাঠামো পরিপন্থী। 

চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন জানান, এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে তিনি জড়িত নন। এসব নিয়োগ ২০১৪ সালের পূর্বে। অবৈধভাবে জনবল কাঠামো উপেক্ষা করে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের ব্যাপারে আমি অবগত নই। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করে তথ্য গোপন করে নতুন এমপিওভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠানে সুপার পদে নিয়োগ নেয়া চাকুরী বিধি পরিপন্থী। এ ধরনের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে তাদের নিয়োগ এবং এমপিও হবেনা।এমপিও আবেদন রিজেক্ট হবে।

ভোলা জেলা শিক্ষা অফিসার, মাধব চন্দ্র দাস বলেন, ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা উপেক্ষা করে সুপার পদে নতুন কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নেয়ার সুযোগ নেই।’ 

বরিশাল শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের কর্মকাÐ জালিয়াতির শামিল। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলে এদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, যারা এ ধরনের তথ্য গোপন করে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে সরকারী বেতন ভাতাদি উত্তোলন করে চাকুরী নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় ভাবে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।