২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন | সংবাদ চিত্র

২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন | সংবাদ চিত্র
২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন | সংবাদ চিত্র

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এটি প্রকাশ করা হয়।


অনুষ্ঠানে অসুস্থতার কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল উপস্থিত হতে না পারলেও অন্য চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মপরিকল্পনায় সুষ্ঠু নির্বাচন চ্যালেঞ্জ, মোকাবিলায় ইসির করণীয়, দলগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখা, নির্বাচনের প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া কখন কোন কাজ করবে তার সম্ভাব্য সময়সূচিও নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি।
চ্যালেঞ্জসমূহ

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি, নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন, ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, অর্থ ও পেশীশক্তির নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ, নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক-পুলিশ-প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল ব্যালট ছিনতাই রোধ, প্ৰাৰ্থী-এজেন্ট-ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন, ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিতকরণ, পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী-জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ, নিরপেক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ।


চ্যালেঞ্জসমূহ উত্তরণের উপায়

বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে সুপারিশগুলো অধিকাংশ জন করেছেন তা বাস্তবায়ন, সকল রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা, সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক ও তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা। এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের সঙ্গে সভা করে তাদের অধিনস্থ কর্মকর্তা যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়ে অধিনস্তদের নির্দেশ দেওয়া, প্রত্যেক ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ভোট কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, ইভিএমের ব্যবহার সবোর্চ্চ ১৫০ আসনে সীমাবদ্ধ রাখা। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে ব্যবহার করা, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ, নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, আরপিও ও নির্বাচনী আচরণ বিধিতে কতিপয় প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যতদূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পূর্বেই শুরু করা যাতে যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হয়, যে সকল প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বিষয়ে প্রার্থীর যুক্তিসংগত আপত্তি থাকবে তাদের নিয়োগ না দেওয়া, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা, গণমাধ্যম কর্মী নিয়োগ ও তাদের জন্যও ব্রিফিং-এর ব্যবস্থা করা, নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, প্রার্থীদের জনসভা করার জন্য স্থান, তারিখ, সময় সিডিউল করে দেওয়া।

 ইসি বলছে, এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে কারচুপির প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। আর এই মেশিনে কারচুপি সম্ভব নয়। কেবল মনস্তাত্বিক ধারণা থেকে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ করা হয়। ইভিএম নিয়ে সংলাপে ১২ দল সরাসরি ও ১১টি শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম চেয়েছে, আর ৬টি দল সরাসরি বিপক্ষে অবস্থা নিয়েছে বলে রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংসদীয় আসনের সীমানা

কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে- ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নতুন একটি নীতিমালা করা হবে। যার ভিত্তিতে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০২৩ সালের মার্চে আসনগুলোর সীমানা বিন্যাসের খসড়া প্রকাশ করা হবে। এপ্রিলে সেই খসড়ার ওপর দাবি আপত্তি নিয়ে মে মাসে সেগুলো নিষ্পত্তির পর জুন মাসে ৩০০ আসনের পরিবর্তিত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে।

ভোটার তালিকা-
বর্তমানে হালনাগাদের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের ২ মার্চ হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে প্রকাশ করা হবে ৩০০ আসনের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা।

ভোটকেন্দ্র-

৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের জুনে কাজ হাতে নেওয়া হবে। জুলাইয়ে খসড়া প্রকাশ।

২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।আজ  সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে খেলাফত মজলিশের সঙ্গে সংলাপের বসে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সিইসি বলেন, বর্তমান সরকার যে তারিখে প্রথম সভা করেছিলেন, সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুযারির প্রথম সপ্তাহে  নির্বাচন।  অনেক প্রস্তুতি, সমঝোতার প্রয়োজন হয়। আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুতিগুলো নিচ্ছি। আইনে যে সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কিছু এখতিয়ার আমাদের আছে। আচরণ বিধিমালা, পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী কাজ করবো। হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে, একটা বড় অংশ নির্বাচনে আসতে চচ্ছেন না বা আসবে না বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে যেন নির্বাচন হয়। অংশগ্রহণ বলতে বড় দলগুলোর অংশগ্রহণে বড় পরিসরে যেন হয়। আমি পত্রিকায় পড়েছি, যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বা সমমনা দল, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাদের নিজস্ব কিছু প্রোগ্রাম আছে, যে নির্বাচনকালীন সরকারের কী বৈশিষ্ট্য হবে।

তিনি বলেন, এটা কিন্তু অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, সংশয় সৃষ্টি করেছে। বিএনপি যদি অংশ না নেয়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করার যে উদ্দেশ, সেটা হয়তো সফল হবে না। আমরা হয়তো নির্বাচন করবো। বিএনপি কিন্তু অন্য দলের সঙ্গে বসে বিশেষ করে শাসক দলের দলের সঙ্গে বসে সুরাহা করতে পারেন, একটা ঐকমতে পৌঁছাতে পারে। তাহলে সেই ঐকমতের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। সে প্রতিশ্রুতি আমরা পাচ্ছি না। সেই অবস্থাটা আসেনি। এখনো একটা সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছি যে আল্টিমেটিলি বিএনপি কী নির্বাচনে আসছে? না ওই অবস্থাটা সরকারের সঙ্গে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা অবস্থান সৃষ্টি করবে। তারপর নির্বাচনে আসবে। যাই হোক সেটা এখনো অনিশ্চিত।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা যেটা করছি, বিএনপিকে আহ্বান করছি, তারা যেন নির্বাচনে আসেন। তাদের রাজনৈতিক কৌশল যদি ভিন্ন হয়, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। তার পক্ষে বা বিপক্ষে আমাদের কোনো অবস্থান নেই। একটা রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা আছে, তাদের প্রজ্ঞা অনুসারে যে কোনো কৌশল বা প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারে। আমাদের কাজ যেহেতু নির্বাচন করা, যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের সঙ্গে সংলাপ করতে চাই। সবাইকে বলবো অংশগ্রহণ করে যে সংসদ হবে, সেটা যেন গণতান্ত্রিক হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই তারা যেন জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংসদ গঠন করবেন।