নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে,শুধু চামড়ার দাম কমেছে | সংবাদ চিত্র

নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে,শুধু চামড়ার দাম কমেছে | সংবাদ চিত্র
সাভারে মৌসুমী ব্যবসায়ী থেকে কেনা কোরবানির চামড়া

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে কেনাবেচা শুরু করেছে কোরবানির পশুর চামড়া। রাজধানী ও আশপাশ এলাকা থেকে আসছে এই কাঁচা চামড়া। এ ছাড়া চামড়াপাচার প্রতিরোধে ও দ্রুত সময়ে ট্যানারি চামড়ার ট্রাক ঢুকতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

ঈদের দিন রবিবার (১০ জুলাই) দুপুর থেকে ট্যানারিগুলোতে চামড়া আসা শুরু হয়। বিকেলে ট্যানারির সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান মাহ‌ফুজা আখতার।
সরেজমিনে চামড়াশিল্প নগরী ঘুরে দেখা যায়, ট্রাকে করে চামড়া আনতে শুরু করেছে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মাদরাসার কর্মকর্তারা। সারি সারি চামড়া বোঝাই ট্রাক ঢুকে পড়ছে ট্যানারিগুলোতে। এরপরই শ্রমিকরা আকারভেদে বাছাইয়ের পর তাতে মাখানো হচ্ছে লবণ। প্রাথমিক সংরক্ষণের পর তা তুলে দেওয়া হবে ড্রামে। এর পরই পর্যায়ক্রমে চলবে চূড়ান্ত সংরক্ষণের কাজ। আগামী দুইদিন ট্যানারিগুলোতে লবণবিহীন কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হবে। এরপর সারা দেশে থেকে প্রায় মাসজুড়েই লবণ মাখা চামড়া সংগ্রহ করবে বলে ধারণা দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।

তবে এবারও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া না কেনার অভিযোগ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি, সরকার যে মূল্য ধরেছে চামড়ার, সে দাম দিচ্ছেন না ট্যানারি মালিকরা।

জামালুল কুরআন মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল জলিল হোসেন বলেন, ‘দেশের সব কিছুর দাম বেড়েছে শুধু প্রতিবছর কমেছে চামড়ার দাম। এ শিল্পটি রক্ষায় সরকারের এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
মৌসুমি ব্যবসায়ী লিটন বলেন, ‘বর্গফুটে চামড়া কেনার কথা থাকলেও ট্যানারি মালিকরা পিস প্রতি দাম দিচ্ছে। যাতে করে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।’

অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সংরক্ষণের জন্য লবণ ও কেমিক্যাল দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাভারে সালমা ট্যানারি মালিক মো. সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, ‘যে হারে কাঁচামাল, লবণ আর রাসায়নিকের দাম বাড়ছে তাতে করে খরচ কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া কর্মীদের মজুরি তো আছেই।’
তিনি দাবি করছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই ট্যানারিগুলো চামড়া ক্রয় করছে। এবার কোরবানি ঘিরে সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, ঈদ মৌসুমে তরল বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ কমাতে ট্যানারিগুলোতে ওয়াটার মিটার ও ফ্লো মিটার স্থাপন করেছে সিইটিপি কর্তৃপক্ষ। চলতি মাস থেকে পানির বিলও দিতে হবে কারখানাগুলোকে। এর ফলে কোনো কারখানা তার চাহিদার চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার করলে কিংবা নির্ধারিত পরিমাপের চেয়ে বেশি তরল বর্জ্য নির্গমন করলে তা চিহ্নিত করা যাবে। যেহেতু পানির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তাই ট্যানারি কারখানাগুলো খরচ কমাতে প্রয়োজনের বেশি পানি খরচ করবে না।

সাভার মডেল থানার ট্যানারি ফাঁড়ি ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রাসেল মোল্লা বলেন, ট্রাকের শৃঙ্খলা ও চামড়া পাচার রোধসহ বিক্রেতা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়ার দাম পেতে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে সমন্বয় করে নজরদারি করছে পুলিশ।

বগুড়ায় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত!!

সকালে যে পশুর চামড়া এক হাজার টাকা দরে কিনেছেন ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিকেলে সেই চামড়ার দাম নেমে এসেছে ৬০০ টাকায়। কেনা চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে দামের পতন দেখতে পাচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোরবানি পশুর চামড়ার দাম কমতে শুরু করেছে বগুড়া শহরে।

আড়তে দাম কম- খবরে এলাকায় কমে গেছে চামড়ার খুচরা মূল্য। কোরবানিদাতারা আশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছে না অভিযোগ। বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেলা ১১টার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা তাদের লোকজন নিয়ে চামড়া কিনতে বসেন। শহরতলী ও গ্রামাঞ্চল থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা চামড়া বিক্রি করতে এলেই তাদের পরিবহন (ভ্যান ও ভটভটি) আটকিয়ে দেওয়া হয়। দরদাম করতে গিয়ে আড়তদারের লোকজন এতোটাই কম দাম বলছেন- যে আসল টাকাই উঠবে না ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।

দুপুর ১টার দিকে শহরের নামাজগড় মোড়ে এক মৌসুমি ব্যবসায়ীর ভ্যান আটকায় আড়তদারের লোকজন। আজিজুল হক নামের ওই ব্যবসায়ীর কাছে থাকা পাঁচটি চামড়ার গড় দাম দেওয়া হয় ৬০০ টাকা করে। আজিজুল জানান, এলাকা থেকে চামড়া কিনে ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাজারে নেওয়া পর্যন্ত তার গড়ে দাম পড়েছে ৭২৫ টাকা করে। আর বাজারে সেই চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হলো।

মহাস্থান এলাকা থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা মামুনুর রশিদ নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ীর ভটভটি থানা মোড় এলাকায় আটকে একই ভাবে কম দাম দেওয়া হয়। তিনি জানান, পুরো বাজারের ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে দাম কম দিচ্ছে। তার মতো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাও তুলতে পারবে না।
শহরের সুত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হাসান জানান, তাদের এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরু কোরবানির পর পরই চামড়ার দাম বলা হয় ৯০০ টাকা। বেলা ১২টার পর ওই চামড়ার দাম ৬০০ টাকার বেশি কেউ বলেনি। বাধ্য হয়ে আগের বলা দামের চেয়ে ৩০০ টাকা কমে তাদের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। 

শহরের কলোনি এলাকার বাসিন্দা এখলাসুর রহমান ২০ হাজার টাকার কেনা খাসির চামড়া বিক্রি করেন মাত্র ৩০ টাকায়।
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি একেএম আসাদুজ্জামান খান বলেন, নগদ টাকার সংকটের কারণে কোনো ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিচ্ছে না। এ কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিজ দায়িত্বে চামড়া কিনতে হবে। তারা বিক্রি করতে না পারলে লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করবে। এখনো বাজারে যে দাম আছে তা গত বছরের তুলনায় ভালো বলে জানান তিনি।