ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও বৃষ্টিতে লোকসান | সংবাদ চিত্র

ভোলায়  তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও বৃষ্টিতে লোকসান | সংবাদ চিত্র
চরফ্যাশন মুজিবনগর ইউনিয়নে একটি তরমুজ ক্ষেতের ছবি
ভোলায়  তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও বৃষ্টিতে লোকসান | সংবাদ চিত্র

ভোলার উৎপাদিত তরমুজ স্বাদে অতুলনীয়।যার কারনে দেশ বিদেশে রয়েছে ভোলার তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। 
চলতি মৌসুমে ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে তরমুজ চাষিরা ব্যাপক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন সেখানে দুই তিন দিনের ভারি বৃষ্টির কারনে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে চাষীদের। লাভতো দূরের কথা এখন চালানও উঠবে না।

এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে চলতি মৌসুমে ভোলা জেলায় তরমুজের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে যারা দেরিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন তারা বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 


স্থানীয়রা জানান, তরমুজের জন্য দ্বীপজেলা ভোলার বেশ সুনাম রয়েছে দীর্ঘদিনের। এখানকার চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ চাষ হয়। ফলনও হয় আশানুরূপ। বিগত বছরগুলোর মত এ বছরও তরমুজের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।

মৌসুমের শুরুতে যাদের ফসল উঠেছে তাদের লাভ হয়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু যাদের ফসল উঠতে ১০/১৫ দিন সময় লেগেছে তারা ব্যাপক লোকসানের মুখে পরতে হয়েছে।অনেকে সব হারিয়ে পথে বসে গিয়েছে।কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাদের ক্ষেতে পানি জমে গাছ মরে যাচ্ছে। তরমুজ কাটার উপযুক্ত না হতেই গাছ মরে যাওয়ায় লোকসনের মুখে পড়েছেন চাষিরা।


চরফ্যাশন  উপজেলার তরমুজ চাষি জামাল উদ্দিন জানান তিনি ১২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে তিনি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু বৃষ্টিতে তার ক্ষেতে পানি জমে গিয়ে সম্পূর্ণ তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে।কিন্তু সম্পূর্ণ তরমুজ কাঁচা বিক্রির উপযোগী হয় নাই। কিন্তু গাছ মরে যাচ্ছে ।

চরফ্যাশন কৃষি অফিস জানান, উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ হয়েছে।এখানে লক্ষমাত্রা ছিল ১২ হাজার হেক্টর কিন্ত তার চেয়ে বেশী ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল।

লালমোহন উপজেলার  এক চাষী মোফাজ্জল  জানান, তিনি ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে তরমুজ চাষ করে মাত্র  ১লাখ ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন । অপর এক চাষি জানান, বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা কাঁচা পাকা সব তরমুজ বাজারে তুলেছেন। পরিপূর্ণ ভাবে না পাকায় তরমুজ স্বাদ না লাগায় কাস্টমাররা তরমুজ ক্রয় করছেন না।বাজারে কার্তি কম, এতে দাম কমে গেছে। গত সপ্তাহে ৮/১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। এখন ওই তরমুজ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জমিতে জমে থাকা পানি সরানোর চেষ্টা করছেন চাষিরা। ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঔষধও দিচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কোথাও গাছ মরে যাচ্ছে। কোথাও  ফেটে  পচে যাচ্ছে তরমুজ। এদিকে ধার দেনাসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যারা তরমুজ চাষ করেছেন তাদের দুশ্চিন্তা বেশি। কীভাবে ঋণ শোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তরমুজ চাষীরা।

গত কয়েকদিন ভোলা - লক্ষীপুরের ফেরী বিকল থাকায় তরমুজ ব্যপারিরা ট্রাক বোজাই করে ঘাটে অপেক্ষা করে থেকে অনেক তরচমুজ ট্রাকেই পচে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 


কৃষি অফিস সুত্র জানান, ভোলায় সাধারণত পৌষের শুরুতে তরমুজের বীজ বুনতে হয়। ওই সময় জমিতে ধান থাকায় অনেকে ১৫/২০ দিন পর তরমুজের বীজ লাগিয়েছিলেন। যারা পরে বীজ লাগিয়েছিলেন তাদের তরমুজ কাটার উপযুক্ত না হতেই বৃষ্টির পানি জমে সব নষ্ট হয়ে গেছে। 


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এফ.এম. শাহাবুদ্দিন জানান, অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যেই তরমুজ আবাদ করার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের ধান উঠতে কিংবা জমি শুকাতে বেশি সময় লেগে যায়। তাই কোন কোন চাষি পৌষের মাঝামাঝি সময়েও তরমুজ চাষ করেছেন। আর যারা দেরিতে চাষ করেছেন তারাই বৃষ্টির কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশী। তবে চাষিরা যদি ব্রি-৭৬, ব্রি-৯৫ অর্থাৎ যে ধানগুলো আগাম চলে আসে তরজুমজের জমিতে সেগুলো চাষ করলে অগ্রহায়নের মধ্যেই তরমুজ আবাদ করতে পারবে আর তাতে আগে ভাগেই তরমুজ তুলে নিতে পারবে।  


কৃষি বিভাগ আরও জানায়, চলতি মৌসুমে ভোলা সদর উপজেলায় ৩৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল।কিন্তু  ৪৫০  হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক এম হাসান ওয়ারিসুল কবির জানান, জেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও মোট ১৮ হাজারেরও বেশী তরমুজ আবাদ হয়েছে।ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। কিন্তু আগাম বর্ষার কারনে তরমুজের অনেক ক্ষতি হয়েছে।