মৃত্যুর হাত থেকে যেভাবে বেঁচে আসলেন ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সোহাগ | সংবাদ চিত্র

মৃত্যুর হাত থেকে যেভাবে বেঁচে আসলেন ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সোহাগ | সংবাদ চিত্র
ছবি|মেহেদী হাসান সোহাগ সভাপতি চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রলীগ।
মৃত্যুর হাত থেকে যেভাবে বেঁচে আসলেন ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সোহাগ | সংবাদ চিত্র

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ পাকের কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া সকলের দোয়ায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছি।সহযাত্রী প্রিয় ছোট ভাই তামিম এখনো নিখোঁজ। আল্লাহপাকের কাছে ফরিয়াদ করি তামিম যেন দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরে আসে।

শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাঠালবাড়ি ঘাট থেকে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার মনস্থির করি। আমরা একটি যাত্রীবাহী ট্রলারে উঠি। সবাই আমাদের চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা এবং প্রায় সবাই আমাদের সুপরিচিত।

মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার প্রায় ৩০মিনিট পর নদীর প্রচন্ড স্রোতে, রুলিংয়ে ট্রলার ডানে বায়ে, উপরে-নিচে দোলতে থাকে। আমি সহ সবাই আল্লাকে ডাকি এবং দোয়া দরুদ পড়তে থাকি। ৫-৭ মিনিট পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। একটু পর যখন আমাদের ট্রলারটি নদীর ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে, হঠাৎ প্রচন্ড স্রোতে ট্রলারটিকে দুটো ধাক্কা মারে  (সম্ভবত ট্রলারটির নিচ থেকে ফেঁটে যায়) এবং সাথে সাথে ট্রলারটি ডুবে যায়, ট্রলারটিকে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করলেও ট্রলারটি একেবারে গভীরে চলে যায়। আমারা সবাই ভাসতে থাকি, ট্রলারে থাকা বেশে উঠা বাঁশ ও কাঠ যার যার মতো করে ধরে ভেসে নদীর স্রোতের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি আর আল্লাহকে ডাকি।  আশেপাশে কোথাও কোন  নৌযান বা নদীর কুল কিনারা দেখতে পাইনি। এভাবে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট পর একটি স্পীড বোট দেখতে পাই, তখন সবাই  বলতে থাকে বাঁচাও বাঁচাও........,বেঁচে থাকার আকুতি জানাই। কিন্তু স্পিডবোটটি থামছিলনা, যেন চলেই যাচ্ছে। একটু পর স্পীডবোটটি থামল এবং প্রায় ৪-৫ মিনিট একই জায়গায় থেমে থাকল (মনে হয়েছিল ঘটনাটি পর্যালোচনা করছিল), পরে আস্তে আস্তে স্পীডটি এগিয়ে আসলো ততক্ষণে আমি স্রোতে ভেসে সবার থেকে অনেক দূরে। 
দূর থেকে মনে হলো শরীফ ভাই কয়েক জনকে স্পীডবোটে উঠার সহযোগিতা করছে, আমি ভাইকে উদ্দেশ্য করে শরীফ ভাই আমাকে বাঁচান..... আমাকে বাঁচান...। আমি তখন প্রায় ১০০ কি ১৫০ মিটার দূরে, স্রোতে নিয়ে যাচ্ছে আরো দূরে। প্রিয় ভাই আমার আপনজন শরীফ ইসলাম ভাই নিজে স্পীডবোটে না উঠে আমার ডাকে আমার দিকে,যেন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধেঁয়ে আসছে। এতক্ষণে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছি। 
ভাই দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমার কাছে এসে বললঃ এটা বয়া, স্পীডবোট থেকে এটা দিয়েছে, এটা ধর, মরলে সবাই মরব, সবাই উদ্ধার না হতে আমি উঠবোনা । আমি বয়াটা ধরি এবং পাশে আরেকজন বয়া ধরে, আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখি। ভাই স্পীডের উদ্দেশ্যে ডাকতে থাকে সবাইকে তোলেন.....।  ততক্ষণে স্পীড বোটটি চলে যাচ্ছে পাড়ের দিকে, হয়তো স্পিডবোটের মানুষ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে তাই ঐ কয়েকজন নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমরা নদীতে ভাসতে থাকি।  প্রায় আধা ঘণ্টা ভাসার পর হঠাৎ দেখি আমরা ঠিক পদ্মা ব্রিজের নিচে ১২ নং পিলারের কাছাকাছি, পিলারের গোড়ায় যেন শো শো করে পানি ঘুর্ণি দিচ্ছে, আর আমাদেরকে টেনে নিচ্ছে। শরীফ ভাই বলে উঠল এবার মনে হয় বাঁচতে পারুমনারে সোহাগ। মুহূর্তে ঘুর্ণি দিয়ে পিলারের ওপাশে নিয়ে গেল। মুহুর্তে আশেপাশে থাকা প্রিয়মানুষ গুলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল আমাদের কাছে থেকে বেশ দূরে দূরে। ততক্ষণে দেখলাম আমাদের কাছাকাছি ২টি  স্পিড বোর্ড,শরিফ ভাই চিৎকার করে বলল সবাইকে তোলেন, আর আমাকে বল্লো আমরা বাচুম, আমাদের সাথে বয়া আছে, আগে ওদের তুলুক। ভাই চিৎকার দিয়ে দূরে থাকা সবাইকে তোলাতে বলে। সবাইকে তোলার পর আমাদের কাছে স্পিডবোট আসলো শরীফ ভাই আগে উঠল এবং রশি দিল আমি কোনমতে রশি ধরলাম ভাই সহ আরেকজন আমাকে তুললো। বোটে উঠার পর আমি আর কিছু বলতে পারিনা। জ্ঞান ফিরে জানতে পারলাম প্রিয় ছোট ভাই তামিম এখনো উদ্ধার হয়নি।
দুর্ঘটনার খবরটি শুনে আমার প্রিয় অভিভাবক আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি মহোদয়ের নির্দেশে সেনাবাহিনীর কয়েকটি স্পীডবোটের টিম নিয়ে শরীফ ভাই তামিমের খোঁজে প্রায় দেড় ঘন্টা দুর্ঘটনার স্থানসহ আশেপাশে খোঁজাখুজি করেও তামিমকে উদ্ধার করা যায়নি।
সবাই দোয়া করবেন, প্রিয় ছোট ভাই তামিমকে যেন সুস্থভাবে ফিরে পাই।

অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করেছে, আমাদেরকে বাঁচিয়েছেন।
বেঁচে থাকুক মানবতা, বেঁচে থাকুক সবার স্বপ্ন।

লেখক | মেহেদী হাসান সোহাগ

সভাপতি

চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রলীগ