চরফ্যাশনে মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা নেই-সংবাদ চিত্র

চরফ্যাশনে মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা নেই-সংবাদ চিত্র

এম আবু সিদ্দিক।।বিগত বছরে জ্যৈষ্ঠ মাসে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিললেও এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রতিদিন জেলেরা নদীতে গেলেও খালি নৌকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। এর ফলে জেলেরা নতুন করে ধারদেনায় ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।

তারপরও প্রতিদিন আশায় বুক বেঁধে নদীতে যাচ্ছে শ,শ জেলে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে। এসব জেলের অধিকাংশই ফিরে আসছে সামান্য ইলিশ মাছ নিয়ে, যা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচ উঠলেও অভাব-অনটনে থাকা জেলে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসেনি। তাই ইলিশ নির্ভর ভোলার প্রায় ২০হাজার জেলে পরিবারের  জীবন-জীবিকা এখন নানামুখী সংকটে।

চলতি মাসের ২০মে  থেকে সাগরে গভীর অরণ্যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এদিকে আমবশ্যা সামনে রেকে মেঘনা-,তেতুলিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।তেতুলিয়া-মেঘনা নদীতে  এখন ইলিশ মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি স্বাভাবিক নিয়মে মেঘনা নদীতে এখন ইলিশ পাওয়ার কথা।জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে মেঘনার পানি লোনা এবং মাঝেমধ্যে মিঠাপানি দুই এর মিশ্রনের প্রভাবে এখন ইলিশের দেখা মিলছে না।  মেঘনার পানি আবার স্বাভাবিক হলেই  এই সময়ে আবার জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ পাবে।

এদিকে মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরতে  আসা কামাল হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে আমরা ১২ জন জেলে জ্বালানি তেলসহ জাল ও নৌকা নিয়ে মেঘনা নদীতে যাই। দুইবার নদিতে জাল ফেলে ৬শ, ৮শ গ্রাম সাইজের ৬টি ইলিশ  পান। মাছ বিক্রি করে আয়তো দূরের কথা, খরচের টাকা না ওঠায় অংশিদার জেলেদের  দুর্ভোগ বাড়ছে।

এভাবে সারা দিন নদীতে জাল ফেলে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে জ্বালানি খরচও আসছে না। জেলেরা প্রায় শূন্যহাতে বাড়ি ফিরছেন।

নৌকার মালিক আবুল হাসেম ,ফায়জুল দুলাল ও রফিক  জানান ,ধারদেনা করে, সুদ, কিস্তিতে টাকা এনে পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণের ভাগিদার জেলেদের দিয়ে আমরা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। ইতোমধ্যে অনেক ভাগিদার জেলে পরিবার পরিজন বাঁচাতে অন্য কাজে চলে যাওয়ায় ভাগীদার জেলের অভাবে অনেক নৌকার মালিক নৌকা বন্ধ করে দিয়েছেন। জাল নৌকা সংরক্ষণে মালিকরা হিমশিম খাচ্ছেন। বন্ধ ইলিশ জাল নৌকা এখন মালিকদের গলায় ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে জানান, গত বছর এই সময় দুই আড়াইশ মণ ইলিশ  সামরাজ ঘাটের আড়তে ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে না তাই ইলিশ সংকটে বাজারে  দাম  অনেক বেশি। 

বৃহৎ সামরাজ মৎস আড়ৎ ঘাট এলাকায় বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ মণ ৭০-৭৫ হাজার টাকা ও ৭শ-৮শ গ্রামের সাইজের ইলিশের মণ ৪৮-৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে  জৈষ্ঠ্য আষাঢ় মাস নদীতে  ইলিশ না পাওয়ার সন্ভবনা রয়েছে। এরপরে আবহাওয়া  অনুকুলে থাকলে অস্বাভাবিক নিয়মে শ্রাবণ ভাদ্র মাসে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে এক মৎস বিশেষজ্ঞ  সূত্রে জানা গেছে।