কালের বিবর্তনে গ্রামীন নকশি কাঁথা হারিয়ে যাচ্ছে | সংবাদ চিত্র

কালের বিবর্তনে গ্রামীন নকশি কাঁথা হারিয়ে যাচ্ছে | সংবাদ চিত্র
কালের বিবর্তনে গ্রামীন নকশি কাঁথা হারিয়ে যাচ্ছে | সংবাদ চিত্র

প্রযুক্তির বদৌলতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সেই নকশি কাঁথা।এক সময়ে গ্রামের দিনমজুর পরিবারের গৃহবধূ, কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হতো গ্রামীণ কাঁথা। এই কাঁথায় তাদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হতো নান্দনিক সেলাই নকশা। ঐতিহ্য হারিয়ে গ্রামীণ  নকশি কাঁথা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে।


শীত শেষে লেপ, তোশক, কম্বলের চাহিদা শেষ। হালকা শীতে এখন ফাগুনের বসন্তে চাহিদা বেড়েছে নকশিকাঁথার। প্রযুক্তির বদলৌতে এখন গ্রামের নকশিকাঁথার কদর কমে গেছে। উন্নত মেশিনের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে  ডিজিটাল নকশি কাঁথা।

ফলে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সংসারের গ্রামীণ কাঁথা সেলাই করে বাড়তি আয়ের উৎস এখন আর নেই। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে মিশে আছে প্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন এই সুচ শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড। গ্রামীণ কাঁথা আধুনিকতার স্পর্শে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হতো নকশিকাঁথা। আবার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটত। গ্রামের নারীদের আড্ডা আর খোশ-গল্পের ছলে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে এখন আর দেখা যায় না। পুরনো শাড়ি, লুঙ্গিতে রং-বেরঙের সুতা দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করা হতো এই কাঁথা।

গ্রামের নারীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে হাতে সুচ আর লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদসহ কয়েক রঙের সুতায় নান্দনিকতার বৈচিত্র্যে সেলাই করে থাকেন কাঁথা।

এই সুই-সুতার এফোঁড়-ওফোঁড় করার মাধ্যমে ফুল-ফল, গাছ-লতাপাতা, জিরা গাঁথুনি, চেইন গাঁথুনি, মরিচ লাইট গাঁথুনিসহ বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা হতো নকশিকাঁথায়। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড। নতুনত্বের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাতের সেলাইয়ে গড়া এই কাঁথা।

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার চর-মাদ্রাজ এলাকার কাঁথা সেলাইকারী খাদিজা বেগম ও মনিরা আক্তার জানান, আগে আমরা সবসময় নতুন বা পুরনো কাপড় দিয়ে কাঁথা সেলাই করতাম। এখন দেশি-বিদেশি কম্বল, লেপ-তোশক আসায় এসব হারিয়ে গেছে। সংসারের কাজের ফাঁকে কাঁথা সেলাই করে আয়-রোজগার হতো, এখন তা আর হয় না। এখন মানুষ কাঁথা সেলাই করে নিতে চায় না, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে একটা কাঁথা নিয়ে এসে সেলাই করি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে, কাপড়  চোপড় কিনতে এবং পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারি না।